সকালে হাঁটার ৯টি উপকারিতা - সুন্দর করে হাঁটার ৮টি নিয়ম

দৈনন্দিন জীবনে শরীরকে সুস্থ রাখতে সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটার প্রয়োজনীয়তা অনেক। প্রতিদিন সকালে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে হাঁটাহাঁটি করলে শরীর ও মন ভালো থাকে। হয়তো সকালে হাঁটার উপকারিতা এবং সুন্দর করে হাঁটার নিয়ম সম্পর্কে অনেক জায়গায় খুঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য পাননি। সমস্যা নেই আজকের আর্টিকেলে আমরা সকালে হাঁটার উপকারিতা ও সুন্দর করে হাঁটার নিয়ম এবং সকালে খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা সহ বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করব।
সকালে হাঁটার উপকারিতা
আপনি যদি সকালে হাঁটার উপকারিতা ও সুন্দর করে হাঁটার নিয়ম এবং সকালে খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক তথ্য জানতে চান তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

সকালে হাঁটার পর যেসব খাবার খাবেন

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটা বা দৌড়ানো একটি ভালো অভ্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়,যখনই স্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রার কথা আসে। সকালে হাঁটার উপকারিতা অনেক। তাছাড়াও সকালে তাপমাত্রা কম হওয়ার কারণে আবহাওয়া অনেকটা ঠান্ডা থাকে। যার কারণে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করলে তা আপনার মন ও শরীরকে প্রাণবন্ত করে তুলবে এবং শরীরকে সতেজ করে তুলবে।

তবে হাঁটার পর অনেকেই আমরা শরীরে ক্লান্তি অনুভব করি। কারণ রাতে লম্বা সময় না খেয়ে থাকার পর,আমাদের শরীরের শক্তি যোগায় সকালের খাবার। তবে আমরা অনেকেই জানিনা সকালে হাঁটাহাঁটি করার পর কি খাওয়া উচিত। আসুন সকালে হাঁটাহাঁটি করার পর কি খাওয়া উচিত এমন কয়েকটি খাবার সম্পর্কে জেনে নেই।

তরমুজঃ তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পানি ও লাইকোন। শরীরের ক্লান্তি দ্রুত দূর করতে পারে এই দুই উপাদান। তাছাড়াও তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকার ফলে,আপনার শরীরে পানি শূন্যতা হবে না। সেজন্য সকালে হাঁটাহাঁটি করার পর তরমুজ খেতে পারেন।

পিনাট বাটার ও কলাঃ পিনাট বাটার কলা অনেক তাড়াতাড়ি শরীরের দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। তাই আপনি সকালে হাঁটাহাঁটি করে এসে পিনাট বাটার ও কলা খেতে পারেন।

চকলেট মিল্ক শেকঃ চকলেট মিল্ক শেক উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় দ্রুত হজম হয় এবং শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ পুরোপুরি দূর করতে সাহায্য করে। তাই আপনি সকালবেলা হাঁটাহাঁটি শেষে চকলেট পান করতে পারেন।

সবজি ও ডিমঃ সবজি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও পুষ্টি উপাদান। তাই সকালবেলা হাঁটাহাঁটি শেষে আপনি ডিম দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি বানিয়ে খেতে পারেন বা ডিমের অমলেট খেতে পারেন। এতে উপস্থিত ভিটামিন ও মিনারেল এবং প্রোটিন আপনার শরীরে দ্রুত শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে।

কটেজ চিজঃ কটেজ চিজ বলতে অনেকগুলো ফলকে একত্রে মিশিয়ে খাবার তৈরি কর কে বুঝায়। এই খাবার কটেজ চিজ ক্যালসিয়াম সোডিয়াম এবং উচ্চ প্রোটিনের উৎস। যা আপনার শরীরের ঘামের সাথে বের হয়ে যাওয়া ইলেকট্রোলাইট ফিরে পেতে সহায়তা করবে।

প্রোটিন শেকঃ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন জটিল শিখে রয়েছে নয়টি প্রয়োজনীয় এমনই অ্যাসিড যা হাঁটার পরে আপনার শরীরকে পুনরায় প্রাণবন্ত করে তুলতে সাহায্য করে। তাই সকালে হাঁটাহাঁটি করে আপনি প্রোটিন শেক খেতে পারেন।

চর্বিবিহীন মুরগির মাংসঃ চর্বি বিহীন মুরগির মাংস প্রোটিনে ভরপুর এবং হাঁটাহাঁটি বা দৌড়ানোর পর আপনার শরীরের পেশি পূর্ণনির্মাণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। সেজন্য আপনি সকালে হাঁটাহাঁটি করার পর শরীরে পুষ্টি জোগাতে সবজি দিয়ে গ্রিলড চিকেন খেতে পারেন।

সকালে হাঁটার ৯টি উপকারিতা

দৈনন্দিন জীবনে শরীরকে সুস্থ-সবল রাখার জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম/এক্সারসাইজ করা প্রয়োজন। আর এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ হলো মর্নিং ওয়াক। সকালে হাঁটার উপকারিতা অনেক। প্রতিদিন মর্নিং ওয়াক কেন করবেন ও প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট সময় মর্নিং ওয়ার্ক করলে কি কি উপকার পাবেন আসুন তা জেনে নেই।

এনার্জি বুস্টারঃ প্রতিদিন সকালবেলা হাঁটলে শরীর সুস্থ থাকে এবং মন তাজা ও ফুরফুরে থাকে। এক গবেষণায় দেখা যায়,প্রতিদিন সকালে একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়ে হাঁটাচলা করলে মানুষের শরীরের এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি পায়। সারাদিন শরীরে ক্লান্তি বা ঝিমানো ভাব থাকে না। শরীর থাকে চনমনে এবং যে কোন কাজকর্মে উৎসাহ পাওয়া যায়।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ সকালে হাঁটার উপকারিতা অনেক। প্রতিদিন সকালে উঠে হাঁটাহাঁটি করলে জীবনের একঘেয়েমি দূর হয়ে যায়। যার ফলে নিজেকে অনেক রিফ্রেশ মনে হবে। যেকোনো কাজ মন দিয়ে এবং চাপমুক্ত ভাবে করতে পারবেন। সবসময় মন খারাপ ও মেজাজ খিটখিটে এই ধরনের সমস্যা কিছু দিনের মধ্যেই দূর হয়ে যাবে। মানসিক অবসাদ আপনার ধারেকাছেও ঘেঁষ তে পারবে না।

অনিয়মিত ঘুমের সমস্যার সমাধানঃ বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষেরই অভ্যাস রাত জেগে ফোন ঘাটা। যার ফলে উড়ে গেছে ঘুম। তবে আপনি যদি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করেন অর্থাৎ আপনার শরীর এক্টিভ থাকে তাহলে ন্যাচারাল স্লিপ হরমোন মেলাটোনিনের ক্ষরণ হবে সঠিকভাবে। এর ফলে আপনি সহজেই ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন। ভুগতে হবে না অনিদ্রার সমস্যায়। রাতে যদি ঠিকমত ঘুম না হয় তাহলে সারাদিন নষ্ট। সেই জন্য সকালে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন। যার ফলে আপনার রাতে ঘুম ভালো হবে।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করলে মানব মস্তিষ্ক উর্বর হয়। যার ফলে যে কোন ধরনের কাজে রিফ্লেক্স বাড়ে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে আপনি দ্রুত অ্যাকটিভ হতে পারেন সকালে হাঁটার ফলে। মাথায় ঠিকমতো রক্ত সঞ্চালন হলে ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে উন্নতি হলে,রোধ যাই অ্যালঝাইমার্সের এর মতো রোগকেও।
সকালে হাঁটার উপকারিতা
হার্টের সমস্যার সমাধানঃ যারা হার্টের রোগী রয়েছেন,হার্ট বিশেষজ্ঞরা এমনিতেই তাদের হাটতে বলেন। নিয়মিত হাঁটাহাঁটির ফলে আপনার হার্ট ভালো থাকবে। আর মন যদি ভালো থাকে তাহলে তো সবকিছুই ভালো থাকতে বাধ্য। হার্ট ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে,নিয়মিত ৩০ মিনিট মর্নিং ওয়ার্ক হেলদি হার্টের অন্যতম রহস্য। যার ফলে প্রায় ৩৫ শতাংশ হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমে যায়। নিয়মিত মর্নিং ওয়াক করলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক এর প্রবণতা কমে। সেই সাথে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

নিয়ন্ত্রণে থাকে ডায়াবেটিসঃ যারা ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন,তাদের জন্য প্রতিদিন হাঁটাচলা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিয়মিত হাঁটাচলা করলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। সেই সাথে কম হয় উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যাও। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন। যার ফলে আপনার শরীরের ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ওবিস এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও সকালে হাঁটাহাঁটি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

চারপাশের সঙ্গে সংযোগঃ আপনাদের মধ্যে অনেকেই প্রতিদিন সকালে দল বেঁধে হাঁটতে যান। আবার অনেকেই একা যান। কিন্তু হাঁটতে গিয়ে পথে অনেক চেনা মানুষের সাথে দেখা হয়। বর্তমান জনজীবনে এই সামাজিক সংযোগ ভীষণ ভাবে প্রয়োজন। চেনা মানুষের সাথে দেখা হওয়া,হাসাহাসি করা,কিছুক্ষণ কথা বলা–এই সব কিছুই আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং সাহায্য করে আপনাকে ভালো রাখতে।

মাসেল এন্ড জয়েন্ট পেন অর্থাৎ ব্যথা কমায়ঃ বর্তমান সময়ের তরুণদের মধ্যে অনেকেরই মাসেল এবং জয়েন্ট পেন দেখা যায়। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন। দেখবেন কয়েক দিনের মধ্যেই এই সব ব্যথা-বেদনা দূর হয়ে যাবে। শরীর থাকবে সতেজ এবং ঝরঝরে।

বডি ব্যালেন্স রক্ষা করেঃ হাঁটাহাঁটি করা,স্ট্রেচ এক্সারসাইজএসব ব্যায়াম প্রতিদিন করলে আপনার শরীরের নানা অংশের ভেতর সামঞ্জস্য অর্থাৎ তালমিল বজায় রাখতে সাহায্য করে। সঠিকভাবে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকলেএবং অতিরিক্ত মেদ না জমলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে সহজে দূরে থাকা যায়। তাই বলা যায় হাঁটাচলার মধ্যে আপনি সুস্থ থাকবেন।

ওজন কমাতে দিনে কতটুকু হাঁটতে হয়

সকালে হাঁটার উপকারিতা অনেক। জনপ্রিয় পিডোমিটার এবং ফিটনেস ট্র্যাকার গুলো প্রত্যেক মানুষকে প্রতিদিন উৎসাহিত করে ১০,০০০ টি পদক্ষেপ নিতে এবং ২০১৬ সালে এক গবেষণায় বিশেষজ্ঞগণরা সম্মত হয় প্রতিদিন ওজন কমাতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য ১০,০০০ টি পদক্ষেপ আদর্শ। প্রায় ৫ মাইল হাঁটার ক্ষেত্রে এটি কাজ করে। তাই যে সকল ব্যক্তি ওজন কমানোর জন্য হাঁটাহাঁটি করতে চান তাদের প্রতিদিন ১০,০০০ কি পদক্ষেপ করা উচিত।

বিকেলে হাঁটার উপকারিতা

দৈনন্দিন জীবনে শরীর কে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য হাঁটার কোন বিকল্প নেই। তবে আপনি সকাল বা বিকাল যেকোনো সময়ে হাঁটতে পারেন। সকালে হাঁটার উপকারিতা যেমন পাওয়া যায়,ঠিক একই ভাবে বিকেলে হাঁটলে ওই উপকার গুলো পাওয়া যায়। শরীর সুস্থ রাখার জন্য ও শরীরের মেদ কমানোর জন্য হাঁটার উপকারিতা অনেক।

পড়ন্ত বিকেলে হাঁটাহাঁটি করলে মন ভালো হয় ও মনের অবসাদ দূর হয়। হাঁটাহাঁটি করলে মানসিক চাপও দূর হয়। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী হাঁটাহাঁটি করলে শরীর সুস্থ থাকে,মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়,হার্ট ভালো থাকে,শরীরে ক্লান্তি দূর হয়,শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ইত্যাদি আরো অনেক উপকার রয়েছে।

সুন্দর করে হাঁটার ৮টি নিয়ম

সকালে হাঁটার উপকারিতা অনেক। কিন্তু আপনাদের মধ্যে অনেকেরই ঠিকমতো হাঁটা বা দাঁড়ানোর অভ্যাস নেই। যদি আপনারা একটু লক্ষ্য করেন তাহলে এই ভুলগুলো দূর করা যাবে। খুব সাধারন একটি কাজ হিসেবে হাঁটার বিষয়টিকে ধরুন। তবে সঠিকভাবে হাঁটার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন সুন্দর করে হাঁটার কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই।
  • হাটার সময় পায়ের পাতা গুলোকে সোজা রাখতে হবে।
  • শরীরকে হালকা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে হাঁটতে হবে।
  • সামনে তাকানোর সময় চোখের সীমানা খুব বেশি দূরে না হওয়াই ভালো।
  • হাঁটার সময় হাত নাড়াচাড়ার সময় লক্ষ্য রাখুন যাতে হাত খুব বেশি নাড়াচাড়া না করে। আপনার শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপনার যার হাটা পছন্দ হয়েছে তার দিকে লক্ষ্য করুন সে কিভাবে হাঁটছে।
  • হাঁটার সময় বুক সামনে এবং কাঁধ পিছনে রেখে হাঁটুন।
  • দেহের ভারসাম্যের জন্য পেটের মাংসপেশি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই জন্য হাঁটার সময় সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে পাশাপাশি পেটের মাংসপেশি যেন টাইট হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • হাঁটার সময় থাই কিছুটা শক্ত করে হাঁটুন।। এক্ষেত্রে বডি ছেড়ে দিয়ে নয় বরং টাইট রেখেই কাজটি করুন।

সকালে খালি পায়ে হাঁটার ৬টি উপকারিতা

যারা স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ,তারা রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটার চেষ্টা করেন। সকালে হাঁটাহাঁটি করার ফলে মানুষের মানসিক চাপ কমে,বিভিন্ন ধরনের হাড়ের ব্যথা থেকে শুরু করে যে কোন ব্যথা কমাতে সাহায্য করে,শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরের মেদ ও ক্যালোরি কমাতে হাঁটতে হয়। সকালে হাঁটার উপকারিতা অনেক এবং হাঁটাহাঁটি করলে মন ভালো থাকে এগুলো আমাদের মোটামুটি সবারই জানা। আসুন জেনে নেই সকালে খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আমাদের শরীরের একাধিক সেন্সারি নার্ভের সুইচ পয়েন্ট থাকে পায়ের তলায়। যখন আমরা খালি পায়ে হাঁটি তখন সেন্সারি নার্ভের সুইচ পয়েন্টগুলো অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে আমাদের শরীরের ভেতর পজিটিভ এনার্জি তৈরি করে। শুধুমাত্র খালি পায়ে হাঁটলেই পায়ের নিচের সেন্সারি সুইচগুলো একটি হয়,যার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এবং শরীরের শক্তিশালী হয়ে ওঠে ইউমিউন সিস্টেম। এর ফলে অনেক সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

শরীরে গতি আনেঃ মানবদেহের চালিকার অন্যতম শক্তি ইলেকট্রনের বিস্তার ও কর্ম ক্ষমতা বাড়ে প্রতিদিন খালি পায়ে হাঁটার কারণে। পায়ের তলায় শ্লেষ্মা ঝিল্লি এবং নির্দিষ্ট অ্যাকু পয়েন্ট এর মাধ্যমেশরীরে প্রবেশ করে এই ইলেকট্রন গুলো। আমাদের মানব দেহের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো তৈরি হয়ে থাকে ইলেকট্রন দিয়ে,যা আমাদের শরীরে জন্মানো ফ্রি রেডিকেল গুলোকে ধ্বংস করে। শরীরের ভেতরে বিভিন্ন কারণে তৈরি হয় ইনফ্লামেশন,যা রোধ করতে আমাদের শরীরে ইলেকট্রনের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরী । যা বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের সাথে লড়াই করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

শরীরে নানা ব্যথা কমায়ঃ আমরা আমাদের শরীরের সব সময় একটি বিশেষ চাপ নিয়ে থাকি,তা হল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব,যা আমাদের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে,খালি পায়ে হাঁটার ফলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় ও শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে।
সকালে খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা
যারা বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নিয়ে জীবন যাপন করছেন,তারা প্রতিদিন খালি পায়ে মাটিতে হাঁটলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবেশরীরের ভেতরে আর্থিং এর দ্বারা সচল হয়ে ওঠে ব্যথা কমানোর হরমোন গুলো। যার কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে এবং শরীরের ব্যাথা ভালো হয়। কয়েকটি গবেষণা করে দেখা গেছে, যে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রেও সহায়তা করে। শরীরের হাড় ও বেশি শক্তিশালী করতে খালি পায়ে হাঁটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হার্ট ভালো রাখেঃ যে সকল মানুষ প্রতিদিন হাঁটতে সাহস করেন না,অল্প হাঁটলেই হাঁপিয়ে যান,সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন না, তারা প্রতিদিন খালি পায়ে হাঁটলে তাদের কার্ডিও ভাসকুলার উন্নতি হবে,এই সময় ভেনাস রিটার্ন বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ হার্টে বেশি বেশি করে রক্ত যেতে শুরু করে। তার সাথে হার্টের রোগের সম্ভাবনাও কমে।

মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়ঃ মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করা। অস্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইলের কারণে মেমোরিলস হওয়া,ভুলে যাওয়ার প্রবণতা সহ বিভিন্ন ধরনের স্মৃতিশক্তি জনিত সমস্যা থাকলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের ভেতরে থাকা মিলন গুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে সকালে খালি পায়ে হাঁটার কারণে। স্বাভাবিকভাবে বুদ্ধিও বাড়ে নিউরনগুলো যদি সক্রিয় থাকে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে এটি অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখে।

মানসিক শক্তি বাড়েঃ বর্তমান জীবনে একটি বড় দুর্যোগের নাম হতাশা,এই হতাশা দূর হয় খালি পায়ে হাঁটা ফলে। আমাদের শরীরের প্রায়ই ৭০ ভাগই পানি দিয়ে তৈরি। যার কারনে মাটির সাথে আমাদের গভীর একটি সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের এই সম্পর্ক যত গভীর হবে,তত আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের তরলের উপাদান গুলোর ভারসাম্য ঠিক থাকবে। মাটিতে ইলেকট্রন রয়েছে যা আমাদের মানসিক শক্তিতে প্রভাব বিস্তার করে,মানসিক অবসাদ দূর করে। 

সেই সাথে প্রতিরোধ করে ইনসোমোনিয়া। আপনারা যারা অনিদ্রায় ভুগেন,তারা প্রতিদিন সকালে খালি পায়ে হাঁটলে উপকার পাবেন। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পায়ে ১৫ মিনিট অল্প গতিতে হাঁটাহাঁটি করলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। যদি হাঁটার জায়গা না থাকে তাহলে অল্প জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেও আপনি এই উপকার পেতে পারেন। প্রথম দিনে অনেকেরই খালি পায়ে হাঁটার জন্য সর্দি বা জ্বর হতে পারে,এতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। ৩-৪ দিন নিয়মিত হাটলেই শরীর অ্যাডজাস্ট করে নিবে।

লেখকের শেষ কথা

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মর্নিং ওয়াক বা হাঁটাহাঁটি করা খুবই ভালো একটি অভ্যাস। প্রতিদিন প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করলে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে। আজকের আর্টিকেলে আপনাদের আগ্রহ বাড়াতে সকালে হাঁটার উপকারিতা ও সুন্দর করে হাঁটার নিয়ম এবং সকালে খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উপরোক্ত বিষয়গুলো ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url