নামাজ না পড়ার ১৫টি কঠিন শাস্তি - নামাজের ফরজ কয়টি
ইসলাম ধর্মে নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বান্দাদেরকে সর্বপ্রথম নামাজ আদায় করতে বলেছেন। নামাজ না পড়ার ১৫টি কঠিন শাস্তি আল্লাহ তায়ালা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। তাই আমাদের সর্বপ্রথম সঠিক নিয়মে নামাজ আদায় করতে হবে। সেজন্য আমাদের নামাজের সঠিক নিয়ম যেমন নামাজের ফরজ কয়টি, নামাজের সুন্নত কয়টি এবং নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি এগুলো সম্পর্কে সঠিক জানতে হবে।
আপনি যদি নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম,নামাজের ফরজ কয়টি ও নামাজের সুন্নত কয়টি এবং নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি এবং নামাজ না পড়ার ১৫টি কঠিন শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সুন্নতে মুয়াক্কাদা কত রাকাত
আমরা প্রতিদিন পাঁচবার ফজরের নামাজ আদায় করে থাকি। ফরজ নামাজ ছাড়াও প্রতি ওয়াক্তে কিছু সুন্নত নামাজ আছে,যা ফরজ বা ওয়াজিবের মত অপরিহার্য নয়। কিন্তু হাদিস থেকে প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এই নামাজগুলি নিয়মিত পড়তেন, কোন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তিনি এই নামাজগুলি ছাড়তেন না। এই নামাজগুলোকে বলা হয় সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
ওয়াক্ত | ফরজ নামাজের আগে না পরে |
কত রাকাত | নামাজের নাম |
---|---|---|---|
ফজর | আগে | ২ রাকাত | সুন্নতে মুয়াক্কাদা |
যোহর | আগে এবং পরে | ৪ রাকাত আগে এবং ২ রাকাত পরে |
সুন্নতে মুয়াক্কাদা |
আসর | নাই | নাই | সুন্নতে মুয়াক্কাদা |
মাগরিব | পরে | ২ রাকাত | সুন্নতে মুয়াক্কাদা |
এশা | পরে | ২ রাকাত | সুন্নতে মুয়াক্কাদা |
সুন্নতে মুয়াক্কাদা সম্পর্কে এক হাদিসে উম্মে হাবিবা (রা.)বলেছেন রাসূল (সা.)বলেন যে ব্যক্তি দিনে এবং রাতে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করে তার জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানানো হয়। এই সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ বিনা কারণে নিয়মিত না পড়লে গুনাহ হবে,কিন্তু কোন জরুরি প্রয়োজনে ছাড়তে পারবে। বিনা কারণে সুন্নাতে মক্কাদা নামাজ ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিকে তিরস্কার করা হবে,কিন্তু ওই ব্যক্তিকে কাফির বা ফাসিক বলা যাবে না।
ওয়াজিবের মতই সুন্নতে মুয়াক্কাদা। ওয়াজিবের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার কাছে যেমন জবাবদিহি করতে হবে,ঠিক তেমনি শুন্যতে মক্কার ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলার কাছে জবাবদিহি করতে হবে।কিন্তু ওয়াজিব ছেড়ে দিলে নিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে,তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা না পড়লে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। কিন্তু শাস্তিও পেতে পারে। সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজগুলো আদায় করার গুরুত্ব অপরিসীম।কারণ হাদিসে এই নামাজগুলোকে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম বলা হয়েছে।
নামাজ না পড়ার ১৫টি কঠিন শাস্তি
আল্লাহ তায়ালা নামাজ না পড়ার ১৫টি কঠিন শাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। এই ১৫টি শাস্তির মধ্যে দুনিয়ায় ছয়টি,মৃত্যুর সময় তিনটি,কবরের মধ্যে তিনটি ও হাশরের ময়দানে তিনটি শাস্তিদেওয়া হবে।
দুনিয়াতে যে ছয়টি শাস্তি দেওয়া হবে
- তার জীবনে কোন বরকত পাবে না
- আল্লাহ তাআলা তার চেহারা হতে নেক লোকের চিহ্ন উঠিয়ে নিবেন
- কোন নেক কাজ করলে, তার সওয়াব পাবেনা
- তার দোয়া আল্লাহ পাকের কাছে কবুল হবে না
- ইসলামের মূল্যবান নেয়ামত হতে তাকে বঞ্চিত করা হবে
মৃত্যুর সময় যে তিনটি দেওয়া হবে
- অনেক দূর্দশাগ্রস্থ হয়েছে সে মৃত্যুবরণ করবে
- ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে
- মৃত্যুর বরণ করার মুহূর্তে তার অনেক পানির পিপাসা পাবে যে, ওই ব্যক্তির মনে হবে পৃথিবীতে যত পানি আছে সব পানি খেয়ে ফেলতে।
কবরের মধ্যে যে তিনটি আজাব দেওয়া হবে
- তার কবর এতো সংকীর্ণ হবে যে তার এক পাশের হাড় অন্যপাশের হাড়ের সাথে মিশে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।
- তার কবরে সব সময় আগুন জ্বালিয়ে রাখা হবে।
- আল্লাহ পাক তার কবরের ১ জন আযাবের ফেরেশতা পাঠাবেন । একটি লোহার মুগুর থাকবে ওই ফেরেশতার হাতে। ওই ফেরেশতা মৃত ব্যক্তিকে বার বার বলবেন যে,তুমি দুনিয়াতে কেন নামাজ পড়ো নি,আজ সেই ফল ভোগ করো। এই কথা বলে আজাবের ফেরেশতা ওই ব্যক্তিকে ফজর নামাজ না পড়ার কারণে ফজর থেকে যোহর পর্যন্ত,জোহর নামাজ না পড়ার কারণে জোহর থেকে আসর পর্যন্ত, আসর নামাজ না পড়ার কারণে আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিব নামাজ না পড়ার কারণে মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত এবং এশার নামাজ না পড়ার কারণে এশা থেকে ফজর পর্যন্ত মুগুর দিয়ে আঘাত করতে থাকবে।
এবং রোজ হাশরের দিন কিয়ামতের ময়দানে বাকি তিনটি শাস্তি দেওয়া হবে।
নামাজের ফরজ কয়টি
নামাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামাজের কোন ফরজ ছুটে গেলে নামাজ কবুল হয় না। সাহু সিজদা করার মাধ্যমেও নামাজ সহি করা যায় না। নামাজ না পড়ার ১৫টি কঠিন শাস্তি থেকে বাচতে হলে এবং সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে হলে আমাদের নামাজের ফরজ সম্পর্কে জানতে হবে। নামাজের মোট ১৩ টি ফরজ রয়েছে। যার মধ্যে নামাজের বাইরে ৭ ফরজ এবং নামাজের ভিতরে ৬ ফরজ রয়েছে। আসুন জেনে নেই কি কি সেই ফরজ গুলো।
নামাজের বাইরে ৭টি ফরজ কি কি
- শরীর পবিত্র হওয়া
- নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া
- কাপড় পবিত্র হওয়া
- সতর ঢাকা
- কিবলামুখী হওয়া
- ওয়াক্ত মত নামাজ পড়া
- অন্তরে নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত করা
নামাজের ভেতরে ৬টি ফরজ কি কি
- তাকবীরে তাহরিমা,(অর্থাৎ নামাজের শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা)
- ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া।
- কিরাত পড়া(অর্থাৎ কোরআন শরীফ থেকে যেকোনো সূরা পড়া, সর্বনিম্ন ছোট এক আয়াত পড়া ফরজ)।
- রুকু করা
- দুই সিজদা করা
- শেষ বৈঠক,(অর্থাৎ নামাজের শেষে তাশাহুদ পরিমাণ সময় বসা)।
নামাজের সুন্নত কয়টি
নামাজ না পড়ার ১৫টি কঠিন শাস্তি থেকে বাচতে হলে এবং আমাদের সহীহ শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করতে হলে নামাজের সুন্নত সম্পর্কে সঠিক নিয়ম গুলো জানতে হবে। নামাজের মোট সুন্নত ৫১ টি। দাঁড়ানো অবস্থায় ১১টি সুন্নত ও কিরাতের সুন্নত ৭ টি ও রুকুর সুন্নত ৮টি ও সিজদার সুন্নত ১২ টি এবং বসার সুন্নত ১৩ টি। আসুন সেই সুন্নত গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
দাঁড়ানো অবস্থায় ১১ টি সুন্নত
- তাকবীরে তাহরীমার সময় সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে,অর্থাৎ মাথা ঝুকানো যাবে না। সিজদার স্থানের দৃষ্টি রাখতে হবে।
- দুই পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাক রাখতে হবে এবং পায়ের আঙ্গুল গুলো কিবলার দিকে রাখতে হবে।
- মুক্তাদির তাকবীরে তাহরিমা ইমামের সাথে হতে হবে।
- তাকবীরে তাহরিমার সময় দুই হাত কান পর্যন্ত উঠাতে হবে।
- হাতের তালু কিবলার দিকে রাখতে হবে।
- আঙ্গুল স্বাভাবিক রাখতে হবে অর্থাৎ একবারে খোলাও যাবে না আবার বন্ধও করা যাবে না।
- ডান হাতের তালু বাম হাতের উপরে রাখতে হবে।
- কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে সামান্য বাকিয়ে কবজিকে ধরতে হবে।
- বাকি ৩ আঙ্গুল হাতের উপর রাখতে হবে।
- নাভির নিচে হাত বাঁধতে হবে।
- সানা পড়তে হবে।
কিরাতের সুন্নত সাতটি
- শুরুতে আউজুবিল্লাহ পড়তে হবে
- এরপর বিসমিল্লাহ পড়তে হবে
- আস্তে আমিন বলতে হবে।
- ফজর এবং জোহর সালাতে পুরা হুজর হতে সূরা বুরুজ এর মধ্যে যেকোনো একটি পড়তে হবে। আসর এবং এশার সালাতে সূরা বুরুজ হতে সূরা বায়্যিনাত এর মধ্যে যে কোন একটি পড়তে হবে। মাগরিবের সালাতে সূরা যিলযাল হতে সূরা নাস এর মধ্যে যে কোন একটি পড়া।
- ফজর নামাজের প্রথম রাকাত লম্বা করতে হবে।
- কিরাত মধ্যম গতিতে পড়তে হবে,অর্থাৎ খুব তাড়াতাড়ি নয় আবার খুব আসতেও নয়।
- ৪ রাকাত ফরজ নামাজের শেষে দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
রুকুর সুন্নত ৮টি
- আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে।
- রুকুতে দুই হাত দিয়ে হাঁটু ধরতে হবে।
- হাঁটু ধরার সময় হাতের আঙ্গুলগুলিকে ফাঁক রাখতে হবে।
- দুই পা কে সোজা রাখতে হবে।
- পিঠকে সম্পূর্ণ বিছিয়ে দিতে হবে।
- নিতম্ব এবং মাথাকে বরাবর রাখতে হবে।
- রুকুতে সর্বনিম্ন ৩ বার “সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম” পড়তে হবে।
- রুকু থেকে উঠার সময় ইমামকে “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা” বলতে হবে এবং মুক্তাদিরদের “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলতে হবে।
সিজদার সুন্নত ১২টি
- আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যাওয়া
- সিজদার প্রথমে দুই হাটু রাখতে হবে।
- তারপর দুই হাত রাখতে হবে।
- এরপর নাক রাখতে হবে।
- এরপর কপাল রাখতে হবে।
- দুই হাতের মাঝে সিজদা করতে হবে।
- সিজদার সময় পেটকে উরু থেকে পৃথক রাখতে হবে।
- দুই বাহুকে বগল থেকে দূরে রাখতে হবে।
- দুই হাতের কনুইকে জমি থেকে উপরে রাখতে হবে।
- সিজদায় সর্বনিম্ন ৩ বার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” পড়তে হবে।
- সিজদা থেকে উঠার সময় আল্লাহু আকবার বলতে হবে।
- সিজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে কপাল, এরপর নাক, এরপর ২ হাত, এরপর হাটু উঠানো এবং দুই সিজদার মাঝে স্থির ভাবে বসতে হবে।
বসার সুন্নত ১৩টি
- ডান পা খাড়া রাখতে হবে ও বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসতে হবে এবং দুই পায়ের আঙ্গুল গুলোকে যথাসম্ভব কিবলামুখী করে রাখতে হবে।
- দুই হাত ঊরুর উপর রাখতে হবে।
- তাশাহুদ পড়ার সময় “আশহাদু আল্লা ইলাহা”- এই সময় ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল কে উপরের দিকে উঁচু করতে হবে এবং “ইল্লাল্লাহু” বলার সময় আঙ্গুল কে নামিয়ে ফেলতে হবে।
- শেষ বৈঠকে দরুদ শরীফ পড়তে হবে।
- দরুদ শরীফ পড়ার পর দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে হবে।
- এরপর উভয় দিকে সালাম ফিরাতে হবে।
- প্রথমে ডান দিক থেকে সালাম ফিরানো।
- ইমামের সালামে নেক্কার জিন,ফেরেশতা এবং ডানে ও বামে মুক্তাদিরদের নিয়ত করতে হবে।
- মুক্তাদিরদের সালামে নেক্কার জিন,ইমাম,ফেরেশতা এবং ডানে ও বামে মুক্তাদিরদের নিয়ত করতে হবে।
- একাকী নামাজ পড়লে কেবল ফেরেশতাদের নিয়ত করতে হবে।
- মুক্তাদীদের ইমামের সাথে সাথে সালাম ফিরাতে হবে।
- ডানদিকে সালাম ফেরানোর সময় আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ পড়ার তুলনায় বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময় আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ নিচু স্বরে পড়তে হবে।
- যার নামাজের শুরুতে কিছু ছুটে গেছে,তার ইমামের সালাম ফেরানোর অপেক্ষা করা।
নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি
শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করতে হলে আমাদের নামাজের ওয়াজিবগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। নামাজের মোট ১৪টি ওয়াজিব রয়েছে। সেই ১৪টি ওয়াজিব কি কি আসুন সে সম্পর্কে জেনে নেই।
- নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া।
- প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা বা যেকোনো সূরার ছোট তিন আয়াত সমান তিলাওয়াত করা।
- প্রথম দুই রাকাত ফরজ নামাজে কিরাত জোরে পড়া।
- সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করার পর অন্য সূরা পড়া।
- নামাজ তাড়াহুড়া করে না পড়া, ধীর স্থির ভাবে নামাজ পড়তে হবে।
- ৩ বা ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজে দুই রাকাত পর বসা।
- ২ রাকাত পর বসে তাশাহুদ পড়া।
- প্রতি রাকাত নামাজের ওয়াজিব এবং ফরজগুলোর ধারাবাহিকতা রাখা।
- নামাজের ফরজ এবং ওয়াজিবগুলো সহিহ ভাবে আদায় করা।
- বিতর নামাজে তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা মিলানোর পর দোয়ায়ে কুনুত পড়া।
- ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলা।
- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজে ২য় রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির বলে রুপাতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলা।
- ইমামের জন্য যোহর ও আছর এবং সুন্নত ও নফল নামাজে কিরাত আসতে পড়া এবং ফজর,মাগরি,এশা,জুমা,ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা,তারাবি এবং রমজান মাসের বিতর নামাজে কিরাত আওয়াজ করে পড়া।
- সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।
যে ৩ সময়ে নামাজ পড়া হারাম
ইসলাম ধর্মে একটি ব্যক্তিকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে। যে কোন অবস্থাতেই নামাজ আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্যেও নামাজ পড়ার নিয়ম করেছেন। তাই বলা যায় নামাজ না পড়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু আল্লাহ তাআলা কিছু সময়ে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। আসুন জেনে নেই সেই সময় গুলো সম্পর্কে।
সূর্যোদয়ের সময়ঃ সূর্য আকাশে সম্পূর্ণ উদয় না হওয়া পর্যন্ত নামাজ পড়া নিষেধ।(বুখারি,হাদিস:১৫২৩)
সূর্য দ্বিপ্রহরের সময়ঃ সূর্য যখন মধ্য আকাশে অর্থাৎ মাথার উপরে অবস্থান করে তখন নামাজ পড়া নিষেধ। সূর্য ঢলে পড়া শুরু হলে আবার নামাজ পড়ার সঠিক সময় শুরু হয়। (মুসলিম,হাদিস:১৩৭৩)
সূর্যাস্তের সময়ঃ সূর্যাস্তের সময় অর্থাৎ সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে সেই সময় থেকে সূর্য ডুবা পর্যন্ত নামাজ পড়া নিষেধ। কিন্তু কোন ব্যক্তির আসর নামাজ পড়তে যদি দেরি হয়ে যায়,তাহলে ওই ব্যক্তি সূর্য ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আসর নামাজ পড়তে পারবে। (বুখারি,হাদিস:৫৪৫)
নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
ইসলামে নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই নামাজ ভুল করে পড়লে কোন নেকী হয় না উল্টো গুনাহ হয়। তাই মুসলমান হিসেবে আমাদের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। আসুন জেনে নেই নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
১. প্রথমে আপনার পুরো শরীর পাক পবিত্র আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
২. নামাজ পড়ার জন্য আপনাকে প্রথমে সঠিকভাবে ওযু করতে হবে।
৩. এরপর জায়নামাযে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে ইন্নি ওয়াজ্জাহ তু ওয়াজ হিয়া লিল্লাজি,ফাত্বরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল্ আরদ্বঅ হানি-ফাঁও ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকী-ন এই দোয়া পড়তে হবে।
৪. এরপর নামাজের নিয়ত করতে হবে এক্ষেত্রে আপনি আরবিতে অথবা বাংলাতে নিয়ত করতে পারেন।
৫. এরপর আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধতে হবে। হাত বাধা পর আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহকারে সানা পড়তে হবে। তারপর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হবে। যদি চার রাকাত ফরজ নামাজ হয় তাহলে প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হবে এবং শেষের দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। তাছাড়া বাকি নামাজগুলোতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হবে।
৬. তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে কমপক্ষে তিনবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম” পড়তে হবে।
৭. তারপর সামি আল্লাহু লিমান হামিদা বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
৮. এরপর আল্লাহ হুয়াকবার বলে দাড়াতে হবে। রুকুতে যাবার সময় প্রথমে আপনার দুই হাটু,তারপর দুই পা,তারপর নাক এবং তারপর কপাল জমিনে লাগাতে হবে। সেজদায় কমপক্ষে তিনবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” পড়তে হবে। ২ সেজদার মাঝখানে আল্লাহুম্মাগ ফিরলি,ওর হামনি,ওহদিনি,ওয়াফিনী,ওরযুকনিএই দোয়াটি পড়তে হবে।
৯.দুই সেজদা শেষে আবার আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে হাত বাঁধতে হবে। আবার সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে এবং সামিআল্লাহু লিমান হামিদা বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে।
১০. এবার দুই সিজদার পর বৈঠকে বসতে হবে। দুই রাকাত নামাজ হলে বৈঠকে তাশাহুদ,দুরুদ শরীফ,দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে প্রথমে ডান দিকে সালাম ফিরাতে হবে এবং তারপরে বাম দিকে সালাম ফেরাতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
মুসলমান হিসেবে আমাদের সর্বপ্রথম নামাজ কে গুরুত্ব দিতে হবে। ইসলাম ধর্মে প্রতিটি মানুষকে আল্লাহতালা নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজ না পড়ার ১৫টি কঠিন শাস্তি আল্লাহ তায়ালা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।আজকের আর্টিকেলে নামাজের ফরজ কয়টি, নামাজের সুন্নত কয়টি, নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি, নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সহ নামাজ না পড়ার ১৫টি কঠিন শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
সম্মানিত পাঠক আশা করি নামাজ সম্পর্কে সকল তথ্য আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নামাজ সম্পর্কে আপনাদের আরো কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। এই ধরনের ইসলামিক কনটেন্ট পেতে সর্বদা আমাদের সাথে থাকুন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url