গজদ্গজদ্ঘ
বসে পানি পান করার উপকারিতা
আমাদের সমাজের প্রচলিত একটি কথা হল পানির অপর নাম জীবন। অর্থাৎ আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের সুস্বাস্থ্য অনেকটাই নির্ভর করে পানি পান করার সঠিক পদ্ধতির ওপর। পানি যে শুধু আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করে তাই নয় পানি আমাদের দেহের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। গবেষকদের মতে,দাঁড়িয়ে পানি পান করার থেকে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী বসে পানি পান করা। আমাদের পানি পান করা উচিত শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থান,মানবদেহের অস্থির সব কিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে। চিকিৎসকরা বিভিন্ন গবেষণা করে পেয়েছেন যে,বসে পানি পান করায় স্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপকারী এবং চিকিৎসকরা আমাদের বসে পানি পান করতে পরামর্শ দিয়েছেন। বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে যে বসে পানি পান করলে মানব শরীরের স্নায়বিক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গবেষকরা আরো বলেন,বসে পানি পান করলে স্নায়বিক উত্তেজনা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও বেশিরভাগ সময় বসে পানি পান করলে কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় থাকে। মানব শরীরের অভ্যন্তরের ছাঁকনিগুলো কুঁচকে যায় না এবং নেফ্রনগুলো দেহাভ্যন্তর থেকে হতে টক্সিন গুলো বের করার সুযোগ বেশি পায়। ফলশ্রুতিতে কিডনি সুস্থ থাকে এবং মানব দেহকে পরিস্রুত করার কাজ বাধাগ্রস্ত হয় না। বসে পানি পান করলে পানি প্রত্যক্ষভাবে পাকস্থলীতে গিয়ে ধাক্কা দেয় না। ফলে পাচক রসের ধরন স্বাভাবিক থাকে এবং হজমের কোন সমস্যা দেখা দেয় না। এছাড়াও বসে পানি পান করলে তা হৃদযন্ত্রের ওপরে অধিক চাপ ফেলে না। ফলে এই চাপের কারণে বিষম খাওয়া,শ্বাসরোধ ইত্যাদি সমস্যা থেকে অনেকটাই বেঁচে থাকা যায় ।
পানি পান করার সঠিক নিয়ম
একজন মানুষকে কি পরিমান পানি পান করতে হবে তা মানুষটির শরীরের উপর, দেহের গঠনের ওপর নির্ভর করে। একজন মানুষকে দিনে কতটুকু পানি পান করতে হবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সঠিক পরিমাণে পানি পান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের কাছ থেকে নিজেকে কি পরিমান পানি পান করতে হবে তা জেনে নিতে পারেন। সব সময় স্থির ভাবে এক জায়গায় বসে আস্তে আস্তে, অল্প অল্প করে পানি পান করা উচিত। পানি পান করার সময় কথা বললে তা শাসনালীতে আটকে বিপদ ঘটতে পারে। তাই পানি পান করার সময় কথা বলা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। আবার হাপাতে হাপাতে পানি পান করাও উচিত নয় ।
পানি পান করার ১০টি সুন্নত
সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সঠিক নিয়মে পানি পান করতে হবে। সঠিকভাবে পানি পান করার পরামর্শ যেমন চিকিৎসকরা দেন সেরকমই পবিত্র হাদীসেও সঠিকভাবে পানি পান করার কথা উল্লেখ রয়েছে।ইসলামে সঠিকভাবে পানি পান করার নিয়মাবলী উল্লেখ আছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিভিন্ন হাদিসে সঠিক উপায়ে পানি পান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
নিম্নে পানি পান করা সম্পর্কিত দশটি হাদিস উল্লেখ করা হলো-
পানি পান আরম্ভ করার সময় বিসমিল্লাহ পাঠ করাঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,যখন তোমরা পান আরম্ভ করবে তখন শুরুতে বিসমিল্লাহ এবংশেষে আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করবে। (সুনানে তিরমিজি,হাদিস নাম্বার- ৩২৬৮)
ডান হাতে পানি পান করাঃ নবীজি (সাঃ) বলেছেন,তোমাদের মধ্যে কেউ বাম হাতে আহার করো না কেননা শয়তান বাম হাতে আহার করে। (শুনানে ইবনে -মাজাহ হাদিস, নাম্বার -৩২৬৮)
অর্থাৎ ডান হাতে পানি পান করা ও খাবার গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বসে পানি পান করাঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একটি হাদিসে উল্লেখ করেছেন,”দাঁড়ানো হাটা কিংবা শোয়া অবস্থায় পানি পান না করে বসে পানি পান করা।”
পানির পাত্র ব্যবহার করাঃ হুজুর (সাঃ) এর একটি হাদিসে উল্লেখ আছে যে,পানির উৎসে মুখ লাগিয়ে পানি পান করার চেয়ে পানি পাত্রে নিয়ে সেই পানি পান করা ভালো। কারণ যদি পানির উৎসে মুখ লাগিয়ে পানি পান করা হয় তবে পানিতে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)অন্য একটি হাদিসে বলেন,তোমাদের মধ্যে কেউ যেন কুকুরের ন্যায় পানিতে মুখ দিয়ে পানি গ্রহণ না করে যেমন করে থাকে একদল। আল্লাহ তা'আলা অসন্তুষ্ট যাদের প্রতি ।
একটি হাদিসে মহানবী (সাঃ) উল্লেখ করেছেন,”মশকের সাথে মুখ লাগিয়ে পানি পান করা উচিত নয়”
(রিয়াজুস সালেহীন, হাদিস নম্বর-৭৬৭)
পরিষ্কার পাত্রে পানি পান করাঃ হুজুর (সাঃ) একটি হাদিসে পরিষ্কার পাত্রে পানি পান করার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি এ হাদীসে উল্লেখ করেছেন যে, রাত্রিবেলা পানি পান করার পাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করে যেন পানি গ্রহণ না করা হয়। তবে উল্লেখ্য পাত্রটি ঢাকা থাকলে পুনরায় পরিষ্কার করা আবশ্যক নয়।(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর- ৩৪৩১)
তিনটি শ্বাসে পানি পান করাঃ মহানবির হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একটি হাদিসে তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,” তোমরা সকলে একেবারে এক শ্বাসে সব পানি পান করবে না, বরং দুই থেকে তিনবার শ্বাস নিয়ে ধীরে-সুস্থে পানি পান করবে। (সুনানে তিরমিজি,হাদিস নম্বর- ১৮৮৫)
পানির পাত্রে নিঃশ্বাস না ছাড়াঃ হুজুর (সাঃ) একটি হাদিসে পানি পান করার সময় সেই পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তোমরা যখন পানি পান করবে তখন পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলবেনা। (বুখারী শরীফ,হাদিস নম্বর- ১৫৪)
পানি পান শেষে শুকরিয়া আদায়ঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)একটি হাদিসে বর্ণনা করেছেন যে,” যখন তোমরা পানি পান করবে তখন শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে পান করবে এবং পান শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করবে”
দাঁড়িয়ে পানি পান না করাঃ একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে,” তোমরা পানি পান করার সময় কখনো দাঁড়িয়ে পানি পান করবে না”( সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর -২০২৪)
পানি পান করার দোয়া
ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় প্রতিটি কাজই আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করতে হয় এবং শেষে শুকরিয়া আদায় করতে হয়। তাই যুক্তিসঙ্গতভাবেই পানি পান করার পূর্বেও একটি দোয়া পাঠ করতে হয়। দোয়াটি নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
“আলহামদু লীল্লা হিল্লাজি ছাকানা আজবান ফুরতান বি রহমাতিহ ওয়ালাম ইয়াজ আ লহু মিলহান উজাজান বি যুনুবানা”।
পানি পান করানোর ফজিলত
বিশ্ব জুড়েই তীব্র দেখা যাচ্ছ। এই তাপদাহের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রির দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড গরমের মধ্যেই যুদ্ধ করে মানুষকে টিকে থাকতে হচ্ছে। আমাদের সমাজে এমন কিছু পেশা আছে যে পেশায় সূর্যের তাপ থেকে আড়ালে থাকলে জীবিকা অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই নিজেদের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে মানুষকে এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। এই তীব্র গরমের দিনে এসব কর্মঠ এবং তৃষ্ণার্ত মানুষকে সেবা করার মাধ্যমে জান্নাত অর্জনের সুযোগ রয়েছ। তৃষ্ণার্তকে পানি পানি পান করানো অত্যন্ত নেকির একটি কাজ। এই রোদের মধ্যে কাজ করা মানুষকে এক গ্লাস পানি পান করিয়ে ক্ষণিকের প্রশান্তি দেওয়ার মাধ্যমে সদকার সোয়াব লাভ করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে বাসভবন,অফিস- আদালত,দোকান,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,বাসস্ট্যান্ড,রেলওয়ে স্টেশন ইত্যাদি স্থানের বাইরে তৃষ্ণার্তদের বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করে সওয়াব অর্জন করা যেতে পারে। এর জন্য অনেক প্রভাবশালী বা বিপুল সম্পদের অধিকারী হওয়ার প্রয়োজন নেই। একটি হাদিসে উল্লেখ্য রয়েছে যে,সাদ ইবনে উবাদা (রাঃ) নবীজিকে বলেন,“ইয়া রাসুলুল্লাহ কোন সদকা সবচেয়ে উত্তম?”রাসুল সাঃ তাকে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলেন,”পানি পান করানো সবচেয়ে উত্তম।”(নাসাই,হাদিস নাম্বার- ৩৬৬৫) তিনি আরো প্রশ্ন করলেন যে,“কেউ যদি পানি চায় আর যদি পানি দেওয়ার সামর্থ্য থাকে তাহলে কি কোন ভাবেই নিষেধ করা যাবে।” “না” কারণ হুজুর (সাঃ) বলেছেন যে,কেউ পানি চাইলে কখনো অস্বীকৃতি জানাবে না।
অপর একটি হাদিসে উল্লেখ আছে যে,হযরত আয়েশা (রাঃ) নবী প্রশ্ন করেন,“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুনিয়াতে এমনকি কোন বস্তু আছে যা সংগ্রহ করতে বাধা দেওয়া হারাম?”রাসুল (সাঃ) উত্তরে বলেন,“লবণ,পানি আর আগুন।” আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) আবার জিজ্ঞাসা করেন,“পানি সম্বন্ধে তো আমরা সকলে অবহিত কিন্তু আগুন ও লবণের ব্যাপারে কি কারনে বাধা দেওয়া অনুচিত হবে?” রাসূল (সাঃ) উত্তরে বলেন,“ওহে, হুমায়রা যে মানুষ আগুন দান করল ওই মানুষ যেন আগুন দিয়ে রান্না করা সকল খাবারই দান করল আর লবণ দান করল সেই ব্যক্তি ওই লবণে খাদ্য যতটুকু সুস্বাদু হল তার সমস্তটাই যেন দান করল। যে ব্যাক্তি একজন মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো যেখানে পানি খুব সহজে পাওয়া যায় সে একটি গোলামকে যেন দাস মুক্ত করল। আর যেখানে পানি সহজলভ্য নয় সে যেন ওই ব্যক্তিকে জীবন দান করল। একটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে,“কোন ব্যক্তি যদি পানির খনন করে আর সেই কূপ থেকে মানুষ কিংবা কোন পাখি বা জীব পানি পান করে তাহলে মহান আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন এর বিনিময়ে সওয়াব প্রদান করবেন। ”অন্য একটি হাদিসে এসেছে যে,প্রত্যেক আদম সন্তানের শরীরে ৩৬০ টি অস্থি বা গ্রন্থি আছে এগুলোর প্রত্যেকটির জন্য ভিন্ন ভিন্ন সদকা রয়েছে। প্রতিটি উত্তম কথায় এক একটি সদকা হিসেবে গণ্য হবে। যেমনএক ভাইয়ের পক্ষ থেকে অন্য ভাইকে সাহায্য করা সদকার অন্তর্ভুক্ত হবে তেমনি এক ঢোক পানি পান করানো,সদকা পথ থেকে সরিয়ে ফেলাও সদকার অন্তর্ভুক্ত।
বেশি পানি পান করার উপকারিতা
বেশি বেশি পানি পান করলে দ্রুত ওজন হ্রাস পায় কারণ পানিতে কোন ক্যালোরি নেই। খুব তাই অল্পক্ষণ পরপর পানি পান করলে তা পেট ভরে রাখতে সাহায্য করবে। আর সকাল বেলা খালি পেটে পানি পান আমাদের বিপাকে সাহায্য কর এর ফলে আমাদের ক্যালোরি দ্রুত বার্ন হয় এবং আমাদের ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে।
বেশি বেশি পানি পান করলে শরীর প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা হয় এবং এই পানির মাধ্যমে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
একটু পর পর বেশি বেশি পানি পান আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ বা কম করতে সাহায্য করে। এটি ব্যক্তির মেটাবলিজম বা পোষক স্বল্প বা কিছু পরিমাণে বাড়াতেও সাহায্য করে। অত্যধিক পরিমাণে পানি পান করলে আমাদের ক্লান্তি এবং মাথাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।এছাড়াও ব্যক্তির ইলেকট্রোলাইট গুলো পাতলা হয়ে যায়।ফলশ্রুতিতে আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় সোডিয়ামের অভাব দেখা দেয়।ওজন কমানোর জন্য অধিক পরিমাণে পানি পান করলে আপনি ওভার হাইড্রেশনে ভুগতে পারেন।
রাতে পানি খাবার নিয়ম
আমাদের শরীরকে সচল রাখতে হলে সঠিক পরিমাণে, সঠিক সময়ে পানি গ্রহণ করতে হবে।এতে আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্য এবং মন সবই ভালো থাকবে। আমাদের শরীর যেন সঠিকভাবে কাজ করে সেই লক্ষ্যে প্রতিদিনপরিমিত পরিমাণ পানি পান করা উচিত।আমাদের অল্প সময় পরপরই পানি পান করা উচিত।এতে আমাদের শরীর হাইড্রেটেড থাকবে। তাই যুক্তিসঙ্গত ভাবেই রাতেও আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা দরকার। এ লক্ষ্যে অনেকেই রাত্রে পানি পান করে। এক্ষেত্রে অনেক সময়ই রাতের বেলা বাথরুমের তাগিদ বেড়ে যেতে পারে। রাত্রিবেলা সাধারণভাবে প্রস্রাবের আউটপুট কমে যায় যা আমাদের ছয় থেকে আট ঘন্টার স্বাভাবিক ঘুমাতে সাহায্য করে। তবে সবার আগে এক বা একাধিক গ্লাস পানি পান করলে এই চক্র পরিবর্তিত হতে পারে।ফলশ্রুতিতে আমাদের ঘুমানোর স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাত আমাদের হার্টের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও মেদ-বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে। ২০১৯ সালের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তি রাতে যারা ছয় ঘন্টার কম ঘুম পায় তাদের হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক দাদা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অত্যধিক থাকে।
ব্যক্তির বয়সও ঘুম ও প্রস্রাব চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই রাত্রে ঘুমানোর আগে পানি পান করার সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা খুবই দরকার।
রাতে ঘুমানোর আগে পানি পান করার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা বিদ্যমান কিন্তু ঘুমাতে যাবার অল্পক্ষণ আগে কিংবা কাছাকাছি সময়ে পানি পান করাটা ঘুম চক্রের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং হৃদরোগের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক রূপে প্রভাব বিস্তার করবে।
রাত্রিবেলা ঘুমাতে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে পানি পান করা ভালো না। ভালো মানের ঘুম নিশ্চিত করতে কমপক্ষে দুই ঘন্টা আগে পানি পান করা উচিত। এতে আমাদের শরীর হাইড্রেটেড থাকবে এবং ঘুম চক্রের ও কোন ব্যাঘাত ঘটবে না।
রাতে ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘন্টা আগে পানি পান করলে মেজাজ ভালো থাকে এবং দেহ ঘড়ির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
রাত্রেবেলা ঘুমানোর আগে পানি পান করলে আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ নিষ্কাশিত হয়। উষ্ণ গরম পানি পান শরীরকে ডিঅক্সিড করতে ও হজম ক্ষমতা বাড়ানোর ভেষজ উপায়। হালকা বা কুসুম গরম পানি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে,শরীরের বর্জ্য ভাঙতে এবং ঘামের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। ঘামের কারণে অনেক সময় রাতের বেলা আমাদের শরীর কিছুটা পানি হারায় অপরদিকে এটি অতিরিক্ত বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে ফেলে এবং ত্বকের কোষগুলোকে পরিষ্কার করে ।এছাড়া ঘুমানোর ২ ঘন্টা আগে উষ্ণ গরম পানি আমাদের দেহকে সারারাত হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করবে। এটি পেটব্যথা কিংবা ক্রাম্পিং ছাড়াতেও সাহায্য করে।
দৈনিক পানি পান করার নিয়ম
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে একটি দিনে কতটুকু, কিভাবে্কতক্ষণ পরপর পানি পান করতে হবে এর সঠিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সঠিকভাবে এবং সঠিক পরিমাণে পানি পান না করলে এটি আমাদের শরীরের জন্য খুব একটা উপকারী হবে না। এর সাথে আরেকটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল আমরা যে পানি পান করবো তা অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে।
এখন একটি মানুষ দিনে কতটুকু পানি পান করবে তার নির্ভর করবে ব্যাক্তিটির শারীরিক গঠনের উপর। প্রত্যেকটি মানুষের শারীরিক গঠন ভিন্ন হয় ফলে তার দেহে পানির প্রয়োজনীয়তাও ভিন্ন হয়। সাধারণত দিনে দুই থেকে থেকে তিন লিটার অর্থাৎ আট থেকে বারো গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে একটি ব্যক্তিকে দিনে কতটুকু পানি পান করতে হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে শারীরিক পরিশ্রম ব্যক্তিটির ওজন ও আবহাওয়ার ওপর।
সাধারণত গ্রীষ্মকালে গরম আবহাওয়া থাকার কারণে শরীরে পানির চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। অপরদিকে,শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করায় আমাদের তৃষ্ণা কম লাগে এবং পানির চাহিদা কম থাকে। যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের পানি সাধারণের থেকে একটু বেশি পান করা উচিত ।
আমরা খুব সহজেই নিজের শরীরে কতটুকু পানি প্রয়োজন তা নির্ণয় করতে পারব। এর জন্য আমাদের সর্বপ্রথম নিজের ভর জানা লাগবে। আমাদের ওজনের উপরে মূলত নির্ভর করে আমাদের কতটা পানি পান করতে হবে। যদি আপনার ওজন ৫২ কেজি হয় তবে যতটুকু পানি গ্রহণ করা প্রয়োজন ওজন যদি ১০৪ কেজি হয় তাহলে সেই পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।
পানি পান করার সময় আমাদের আরো একটি দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দিকটি হলো- পানি পান করার সময় অবশ্যই বসে পানি পান করতে হবে। কোন কারনে যদি বাইরে থাকার কারণে বসে পানি খাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে,শুধু তৃষ্ণা মিটানোর মতই পানি খাওয়া উচিত। আর পানি অবশ্যই আস্তে আস্তে পান করতে হবে যেন বিষম না লাগে। এছাড়া বাইরে থেকে হেটে আসার কারনে কিংবা কোন কারনে হাঁপিয়ে থাকলে একটু বিশ্রাম নিয়ে বসে পানি পান করা উচিত। এতে পানি আর গলায় আটকে যাবার কিংবা বিষম খাবার সম্ভাবনা খুবই কম।
প্রতিদিন কত লিটার পানি খাওয়া উচিত
আমাদের সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে আমাদের পানি খাওয়ার পরিমাণের ওপর। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন লিটার বা ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে ব্যক্তির ওজন,বয়স ও শ্রমের ওপর পানি পান করার পরিমাণ অনেকটাই নির্ভর করে।
সকালে বাসি মুখে পানি খেলে কি হয়
সকালে খালি পেটে পানি পান করলে শুধু যে পাকস্থলী পরিষ্কার হয় তাই না এই অভ্যাস অনেক রোগেরই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত সকালে খালি পেটে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুললে মানব দেহ স্বাভাবিক ও সচল থাকবে।পরিপাক প্রক্রিয়া ঠিকঠাকভাবে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে শরীরকে সাহায্য করবে এবং হজম শক্তি বাড়াবে। হজম শক্তি বাড়লে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যায় দূর হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url