হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানুন
দৈনন্দিন জীবনে অনেকেরই হার্টের সমস্যা দেখা যায়। এই হার্টের সমস্যা বংশগত ভাবেও হয় আবার বিভিন্ন মানসিক চাপ ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস তাদের কারণেও হয়। আপনাদের ভেতরে অনেকেই হয়তো এই হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। এ হার্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে না হয়ত অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য পাননি। আজকের আর্টিকেলে আমরা হার্টের রোগীর খাবার তালিকা ও হার্টের জন্য উপকারী ফল এবং হার্ট ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আপনি যদি হার্ট ভালো রাখার উপায় ও হার্টের রোগীর খাবার তালিকা এবং হার্টের জন্য উপকারী ফল বা খাবার সহ হার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক তথ্য জানতে চান তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
হার্ট ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
গুরুতর হার্টের অবস্থার লক্ষণ হল হার্টের হাড়ের পরিবর্তনে। হার্টের সমস্যা থেকে শরীরকে রক্ষা করতে হৃৎস্পন্দনের মাত্রা সঠিক হওয়া দরকার। আপনার হার্ট ভালো আছে কিনা তা বোঝার উপায় সম্পর্কে নিজে বিস্তারিত দেওয়া হল।
আপনার শরীরে সহজে ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম এবং বুকে চাপ অনুভব সমস্যাগুলি দেখা দিলেই বুঝবেন আপনার হার্টের সমস্যা হয়েছে। তাছাড়া অতিরিক্ত ঘাম হল হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হার্ট বিট চলাচল করে প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০০ বিট পর্যন্ত।
শারীরিক অথবা মানসিক চাপের ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত চললে হার্ট দ্রুত প্রসারিত হয়ে থাকে। আমরা যখন দৌড়াই, তখন আমাদের হার্টের রেট বৃদ্ধি পায়। কিন্তু যখন মানুষের স্বাভাবিক অবস্থায় শ্বাসকষ্ট হয় ও হার্টের রেট কমতে থাকে, তখন হার্ট অ্যাটাকের মত সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য স্বাভাবিক বিশ্রামের ফলে হার্ট রেট প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ মাত্রা থাকা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত মায়ো ক্লিনিক কর্তৃক গবেষণা পত্রে জানা গেছে, অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটে পালস রেট হতে পারে ৪০ এর কম। এই মাত্রার হার্ট রেট কে সুস্থ হৃৎপিণ্ড বলা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষায় তাকে কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস বলা হয়। তবে হার্ট রেট কমবেশি হলেই বুঝবেন আপনার হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
হাভার্ড মেডিকেল স্কুল কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গিয়েছে হার্টের বিশ্রামের হার ৬০ থেকে এর বেশি হলেই হার্ট বিকল হয়ে যেতে পারে। এমনকি মৃত্যুবরণ করারও সম্ভাবনা থাকে। ২০১৩ সালে তৈরি একটি জার্নালে দেওয়া হয়েছে,১৬ বছরে আনুমানিক ৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই কার্ডিওভাসকুলার রোগে। শরীরের ওজন বেশি, উচ্চ রক্তচাপ, শারীরিক দক্ষতা ইত্যাদির কারণে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
সাধারণত RHR এর মাত্রা ৮০ থেকে ৯০ এর দ্বিগুণ হলেই মৃত্যু ঘটতে পারে। কিন্তু কোন অসুবিধা ছাড়াই শারীরিক দুর্বলতা ও খুব অল্পতেই হাপিয়ে যাওয়া এবং ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সমস্যা হলে সতর্ক থাকুন। কারণ শারীরিক দুর্বলতা ও শ্বাস প্রশ্বাস কমে এলে বুঝতে হবে হৃৎপিণ্ডের বিশ্রামের প্রয়োজন। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে, অতিরিক্ত ওজন,বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, মধ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মধ্যপান, শারীরিক পরিশ্রম না করা এবং মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ।
হার্টের রোগীর খাবার তালিকা
হার্ট সুস্থ রাখার জন্য খাদ্যের রুটিনে কিছু খাবার যুক্ত করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। তবে এর জন্য দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। নিচে হার্টের রোগীর একটি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো-
সময় | খাবার সমূহ |
---|---|
সকালের নাস্তা | ওটস,ডিম,ফলমূল,আটার রুটি,খিচুরি,দই,সালাত ইত্যাদি খেতে পারেন। |
দুপুরের খাবার | সবুজ শাঁক-সবজি,সামুদ্রিক মাছ,শীম,মটরশুটি,কম ফ্যাটযুক্ত মাংস,চামড়া ছাড়া মুরগি,লাল চালের ভাত ইত্যাদি খেতে পারেন। |
বিকালের নাস্তা | কমলা,বাদাম,বেরি জাতীয় ফল,ডার্ক চকলেট,বীজ জাতীয় খাবার,ওটমিল,গ্রিন টি ইত্যাদি খেতে পারেন। |
রাতের খাবার | আটার রুটি,মাশরুম,সবুজ শাঁক-সবজি,সামুদ্রিক মাছ,ছলার ডাল ইত্যাদি খেতে পারেন। |
হার্টের রোগীর জন্য দুধ কি উপকারী
দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার। দুধ তরল বলে অনেকেই একে পানীয় হিসেবে ঘোষণা করে থাকে। দুধের মধ্যে রয়েছে সব ধরনের খাদ্য উপাদান যেমন– আমিষ,শর্করা,খনিজ লবণ ও চর্বিসহ সব ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। যেমন– সোডিয়াম, ভিটামিন, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ। নিউজিল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া,যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪ লাখ মানুষের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে,ডেইরি মিল্ক অথবা লো ফ্যাট মিল্ক হৃদরোগ, এলডিএল,এইচডিএল কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগ হ্রাস করে থাকে।
কিন্তু ফুল ক্রিম মিল্ক এবং ফ্লেভার্ড মিল্ক অথবা দুগ্ধজাতীয় খাবার হার্টের জন্য ক্ষতিকর। আপনি যদি দুগ্ধ জাতীয় খাবার খান তাহলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে এবং আপনি মোটা হয়ে যেতে পারেন,এটা মনে রাখতে হবে।কিন্তু লো ফ্যাট মিল এবং চিজ হার্টের জন্য ভালো। ঘি,বাটার এবং ফুল ক্রিম মিল্ক দিয়ে তৈরি খাবার হার্টের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাই দুধ পান করার আগে অবশ্যই চিন্তা করবেন হার্ট ও অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি থাকলে পূর্ণননীযুক্ত দুধ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে।
হার্ট অ্যাটাকের যে লক্ষণ গুলো এড়িয়ে যাবেন না
হার্ট অ্যাটাকের জন্য মানুষের আগে থেকেই অসুস্থ থাকার প্রয়োজন নেই। অনেক সময় সুস্থ মানুষের ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। তাই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে আপনার সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে হাসপাতালে যেতে দেরি হতে পারে,যার ফলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।তাই আসুন জেনে নেই হার্ট এটাকে লক্ষণগুলো সম্পর্কে–
- বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা
- হাত ও ঘাড় ব্যথা
- পেতে তীব্র ব্যথা
- কাশি ও শ্বাসকষ্ট
- অতিরিক্ত ঘাম
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- বমি বমি ভাব ও বমি
হার্ট শক্তিশালী করার উপায়
হার্টের রোগ কে বলা হয় নিরব ঘাতক। ৩০ বছরের উপরে সবাইকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। বংশগত ভাবেও অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। হৃদরোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মানসিক চাপ কমাতে হবে এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস স্বাস্থ্য ঝুকির দিকে ঠেলে দেয়। ভালো রাখার কিছু কার্যকর উপায় নিচে দেওয়া হল–
- হার্ট ভালো রাখতে সবাইকে প্রথমে খাদ্যের বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। চর্বি এবং শর্করা জাতীয় খাদ্য।
- অল্প পরিমানে খেতে হবে। খাবারে আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।
- দিনে প্রায় ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে। বেশি সময় ধরে একটানা বসে থাকা যাবে না এবং লিফটে ওঠা একদম বাদ দিয়ে দিতে হবে।
- যদি কারো ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে এবং রক্তচাপ, শরীরের ওজন ও গ্লুকোজেরমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
হার্টের জন্য রসুনের উপকারিতা
রসুনের প্রচুর পরিমাণে রয়েছে জিংক,ম্যাগনেসিয়াম,আয়রন,থায়ামিন ও কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি পুষ্টিগুণ। যা হার্টের জন্য বেশ উপকারী। রসুন শরীরে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করে এবং স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে থাকে। তবে এটি উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর। ভাজা রসুন শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়,কারণ ভাজা রসুন শরীরের রক্ত জমতে দেয় না। সেজন্য হৃদরোগ অথবা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যায়।
হার্ট ভালো রাখার ৫টি উপায়
দৈনন্দিন জীবনে হার্টকে ভালো রাখার জন্য আপনাকে কয়েকটি অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য আপনাকে হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে হবে এবং সেটি অনুসরণ করতে হবে। হয়তো অভ্যাস গুলো দেখে আপনার অনেক সহজ মনে হবে,কিন্তু আসলে ব্যাপারটা এত সহজ নয়। তাই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আপনি এসব অভ্যাস সহজেই গড়ে তুলতে পারবেন। আসুন জেনে নেই
হৃৎপিণ্ড বা হার্ট ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে।
নিয়মিত ব্যায়ামঃহার্ট ভালো রাখতে প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম আপনাকে টানা করতে হবে এমনটি নয়। আপনি এই সময়টাকে ভাগ করে নিতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ১০ মিনিট ঘাম ঝরালেন, দুপুরে খাওয়ার আগে ১০ মিনিট হাঁটলেন,বিকেলে অথবা রাতে আরো কিছু কাজ বা বাসায় বাচ্চাদের সাথে খেলে ব্যায়াম সেরে নিতে পারেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাঃ হার্ট ভালো রাখতে হলে আপনাকে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সেজন্য আপনাকে তৈলাক্ত যুক্ত খাবার ও ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে এবং বেশি বেশি শাক-সবজি খেতে হবে। তাছাড়াও শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে যেমন প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে ৩০মিনিট হাঁটতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসঃ হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের কোন বিকল্প নেই। সেজন্য আপনাকে লাল মাংস এবং ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করতে হবে। খাবারে লবণের পরিমাণ কম করুন। প্যাকেটজাত খাবার কম খান বা পরিহার করুন। দিনে খাবারের ১ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম লবণের বেশি ব্যবহার করবেন না। বিভিন্ন ফলমূল এবং শাকসবজি খান। তাছাড়া গ্রেইনযুক্ত খাবার খেতে পারেন, যেমন লাল চাল,পপকর্ন,ওটমিল গমের রুটি ইত্যাদি।
ধূমপান পরিহার করাঃ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটা আমরা সবাই জানি। ধূমপান ছাড়ার নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতি নেই। সবাই সবার মতো করে চেষ্টা করে থাকে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের পরামর্শে দুইটি পদ্ধতি আপনি অবলম্বন করতে পারেন। প্রথমে আপনাকে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। তারপর আপনাকে ধুমপান ত্যাগ করার উপকারী দিকগুলো সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। ত্যাগ করতে হলে আপনাকে বন্ধুদের সঙ্গে ছাড়তে হবে এবং আপনি নিজেকে কর্মে ব্যস্ত রাখুন দেখবেন সুফল পাবেন।
ইতিবাচক মনোভাব ও মানসিক চাপ কমানঃ হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে মানসিক প্রশান্তির অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু কর্মস্থান, পরিবার অথবা সমাজ থেকে মানুষ বিভিন্নভাবে চাপে থাকে। এসব চাপ মোকাবেলা করার পাশাপাশি,বুদ্ধি করে কমাতেও হবে। প্রতিদিন কাজ করার পর দিন শেষে নিজের জন্য একটু আলাদা করে সময় বের করুন, পছন্দের গান শুনুন অথবা বই পড়ুন এবং কোন কারনে মনে কষ্ট পেলে তা বন্ধুদের সাথে অথবা প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন।
কখনো মনে কষ্ট রাখবেন না, এই ধরনের অভ্যাস হৃদরোগকে আমন্ত্রণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে ১৯৮০ সালের তুলনায় বর্তমানে মানুষ দ্বিগুণ পরিমাণএকাকীত্ব বোধ করে। একাকীত্ব প্রচুর পরিমাণে মানসিক ক্ষতি এবং শারীরিক ক্ষতিও করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে মানসিক চাপ কমাতে হবে এবং আশেপাশের মানুষের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
হার্টের জন্য উপকারী ফল
সুস্বাস্থ্যের জন্য ফল বেশ উপকারী খাদ্য। হার্টের রোগীর খাবার তালিকার মধ্যে ফল অবশ্যই রাখতে হবে। এর মধ্যে কিছু ফল রয়েছে যেগুলো স্কিন অথবা ত্বক সজীব রাখতে সাহায্য করে থাকে। আবার কিছু ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিছু ফল হজমে সহায়তা করে থাকে। আবার কোন ফল শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়াও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বেশ কার্যকরী কিছু ফল রয়েছে। আসুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক–
আপেলঃ আপেলে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও এটি বেশ উপকারী। প্রতিদিন আপেল খেলে স্ট্রোক, হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমে।
পেঁপেঃ পেঁপে হল ভিটামিন সি যুক্ত একটি ফল, যা হৃদরোগের জন্য বেশ উপকারী।
জামঃ জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট,ফাইবার ও পটাশিয়াম। এই জন্য জাম রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। সেই সাথে স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
কলাঃ হৃদরোগের অন্যতম কারণ হলো রক্তচাপ। কলায় উপস্থিত পটাশিয়াম শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাছাড়া প্রাকৃতিক হৃদস্পন্দন নিয়মিত করতে সাহায্য করে। কারণ হৃদস্পন্দন কম বেশি হলে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে কলাতে উপস্থিত খনিজ হৃদস্পন্দন ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
কমলাঃ কমলা তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। কমলায় উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে জন্য কমলা স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বেশ কার্যকরী। তবে আপনি কমলা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের জাতীয় ফল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন, উপকার পাবেন।
হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার
হৃদরোগের ঝুঁকি ও রক্তে কলেস্টেরল এর মাঝে সম্পর্ক অজানা কোন কিছু নয়। প্রতিদিন এর খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনলে রক্তে কলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো যায়। সেজন্য আপনাকে হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার সম্পর্কে জানতে হবে। আসুন জেনে নেই হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার সম্পর্কে।
অতিরক্ত ভাজা এবং তেলযুক্ত খাবারঃ অতিরক্ত ভাজা এবং তেলযুক্ত খাবারে প্রচুর ফ্যাট থাকে,যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ফাস্ট ফুডঃ ফাস্ট ফুডে থাকে অনেক পরিমানে কলেস্টেরল ও ক্যালরি,যা হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তাই ফাস্টফুড খাওয়া সীমাবদ্ধ করতে হবে।
চিংড়িঃ চিংড়ির মাংসে প্রচুর পরিমানে কলেস্টেরল থাকে। তাই হার্টের রোগীদের এই জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত।
কলিজা,মগজ,হাড়েড় মজ্জাঃ কলিজা,মগজ,হাড়েড় মজ্জা অনেক বেশি পরিমানে কোলেস্টেরল ধারণ করে থাকে। তাই হার্টের রোগীদের এই জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত।
মাছের ডিম-মাথাঃ ব্লাডে লিপিড প্রফাইল বৃদ্ধি করার জন্য মাছের ডিম এবং মাথা অতি মাত্রাই ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল ধারণ করে থাকে। যার কারনে হার্টের রোগীদের এই জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত।
ডিমের কুসুমঃ ডিমের কুসুম এ রয়েছে অতিমাত্রার কোলেস্টেরল। তাই এটি অল্পপরিমান সেবন করা উচিত।
ঘি-মাখন-ডালডাঃ ঘি,মাখন,ডালডাই রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। যা হার্টের ক্ষতি করতে পারে। তাই হৃদরোগের সমস্যা থেকে বাচার জন্য অলিভ অয়েল অথবা সান ফ্লাওয়ার অয়েল ব্যবহার করা উচিত।
লাল মাংসঃ লাল মাংসে থাকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। যা হৃদরোগকে আমন্ত্রন করে থাকে। তাই লাল মাংস নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত।
নারিকেলঃ নারিকেল এ রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। যা হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। তাই নারিকেল তেল সেবন পরিহার করতে হবে।
হার্ট অ্যাটাক হলে কি করনীয়
হার্ট অ্যাটাক হলে প্রথমে রোগীকে শুইয়ে দিতে হবে। তারপর জিহ্বার নিচে এ্যাসপিরিন নামক একটি ট্যাবলেট রাখতে হবে। এসপিরিন ট্যাবলেটের পাশাপাশি যদি পাওয়া যায় তাহলে একটি সরবিট্রেট ট্যাবলেট ও রাখতে হবে। তারপর দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ হার্ট অ্যাটাকের প্রথম এক ঘন্টার মধ্যেই হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশীর ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি।
লেখকের শেষ কথা
মানসিক চাপ ও হার্টের সমস্যা কোন আলাদা কথা নয়। মানসিক চাপ হার্টের রোগের জন্য অন্যতম কারণ। আজকের আর্টিকেলে হার্টের রোগীর খাবার তালিকা ও হার্টের জন্য উপকারী ফল এবং হার্ট ভালো রাখার উপায় সহ হার্ট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা হার্ট সম্পর্কে সকল সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। হার্ট সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চাইলে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url