বেল পাতার ৫টি ঔষধি গুনাগুন
বেল গাছ একটি অনেক উপকারী উদ্ভিদ। বেল ফলের পাশাপাশি বেল পাতা ও অনেক উপকারী। বেল পাতার ঔষধি গুনাগুন অনেক। আপনারা হয়তো বেল পাতা সম্পর্কে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য পাননি। সমস্যা নেই আজকের আর্টিকেল আমরা বেল পাতার ঔষধি গুনাগুন এবং বেল পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক তথ্য আলোচনা করব।
আপনারা যদি বেল পাতার ঔষধি গুনাগুন এবং বেল পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে যাবতীয় সকল সঠিক তথ্য জানতে চান তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বেল পাতার বৈশিষ্ট্য
বেল পাতায় রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ফাইবারের পাশাপাশি ভিটামিন এ, বি১, সি এবং বি৬ এর মত পুষ্টিগুণ। সাহায্যে মানুষের স্বাস্থ্যের অনেক সমস্যা দূর করা যায়। বেল পাতা নিয়মিত খেলে পেটের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় এবং বেলপাতা হার্ট ও লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এই বেল পাতা মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বেল পাতার বৈজ্ঞানিক নাম
বেল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হল Angle Marmelos. এই গাছ কাঠের আপেল,বেল গাছ এবং বানরের ফল নামেও পরিচিত। এই গাছ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্ণমোচী গাছ। এই গাছটি তার ফলের জন্য চাষ করা হয় যা বিভিন্ন ঔষধ এবং রান্নায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই গাছের ফল মিষ্টি, সুগন্ধিযুক্ত সহ একটি বড় ও শক্ত খোসাযুক্ত ফল।
বেল পাতার ৫টি ঔষধি গুনাগুন
বেল খাওয়ার যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে। ঠিক তেমনি বেল পাতারও বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা রয়েছে। আসুন বেল পাতার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নেই।
শরীর ঠান্ডা রাখেঃ নিয়মিত সকালে বেল খাওয়া শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। কারণ বেলপাতা খুবই ঠান্ডা। তাই সকালে বেল পাতা খেলে সারাদিন শরীর ঠান্ডা থাকে। সাধারণত গরমের দিনে বেল পাতা খাওয়া অনেক উপকারী বলে মনে করা হয়। বেলপাতা মুখের ভিতরে থাকা ক্ষত দূর করে।
পেটের সমস্যা দূর করেঃ বেল পাতায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে। যার কারণে এটি পেটের জন্য বেশ উপকারী বলে ধারণা করা হয়। নিয়মিত বেলপাতা খেলে গ্যাস, এসিডিটি ও বদ হজমের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মিলবে। তাছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও যাদের পাইলস রয়েছে তাদের জন্য খালি পেটে বেল পাতা খাওয়া বেশ উপকারী বলে প্রমাণিত হয়ে থাকে। বেলপাতা হজম পদ্ধতিকে আরো শক্তিশালী করতে সহায়তা করে থাকে। বেল পাতার সাহায্যে পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে যায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখেঃ সাধারণত বেলপাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বেল পাতা খেতে পারেন। বেল পাতায় থাকা ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। তাই সুস্থ থাকার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। যারা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা অবশ্যই নিয়মিত সকালে খালি পেটে বেলপাতা খেতে পারেন। বেল পাতায় থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে থাকে।
চোখের ছানি ও জ্বালা উপশম করেঃ বেল পাতাকে ভালভাবে পিষে তা থেকে রস বের করে মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি ও জ্বালা উপশম হয়। তাছাড়াও বেল পাতার রস,মধু ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে জন্ডিস দূর হয়।
বেল পাতা খাওয়ার নিয়ম
বেল পাতা অনেক উপকারী একটি উপাদান। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে বেল পাতা থেকে উপকারিতা পেতে হলে আপনাকে বেল পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। বেল পাতা দুইভাবে খাওয়া যায়। প্রথমত বেলপাতা নিয়ে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে তা ভালোমতো চিবিয়ে খেতে পারেন।
আবার বেল পাতাকে ভালোমতো পিষে সেটা থেকে রস বের করে তার সাথে মধু, গোলমরিচের গুঁড়া ইত্যাদি মিশিয়ে খেতে পারেন। এই বেল পাতা নিয়মিত খেলে বিভিন্ন ধরনের অসুখ থেকে মুক্তি মিলবে এবং মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
রূপচর্চায় বেল পাতার ব্যবহার
বেল পাতা অনেক উপকারী একটি উপাদান। বেল পাতার ঔষধি গুনাগুন অনেক। রূপচর্চায় ও বেল পাতার ব্যবহার হয়ে থাকে এবং মুখের ব্রণ দূর করতেও বেল পাতা বেশ কার্যকর। আসুন জেনে নেই রূপচর্চায় বেল পাতা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে।
প্রথমে আপনাকে বেল গাছ থেকে কিছু বেল পাতা ছিড়ে আনতে হবে। তারপর সেগুলোকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোমতো ধুয়ে ব্লেন্ডারে বেলপাতা গুলো ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর একটি পাত্রে ২ চামচ বেল পাতা, হাফ চামচ মধু এবং ১ চামচ নিমের পাতা বাটা নিয়ে সব উপাদান গুলোকে একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর আপনাকে ত্বকে সেই মিশ্রণটি ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে।
এরপর আপনাকে ৩০ অপেক্ষা করতে হবে। ৩০ মিনিট হয়ে গেলে আপনাকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলতে হবে।এভাবে আপনি প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বকের ব্রণ দ্রুত দূর হয়ে যাবে এবং টকের তৈলাক্ত ভাব দূর করবে। আপনারা এই ফেস প্যাকটি তৈরি করে ফ্রিজে নরমালে রাখছে তিন দিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
বেল পাতার রস খেলে কি হয়
বেল পাতার রস বিভিন্ন ধরনের রোগ সারাতে সহায়তা করে। বেল পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি ও চোখের জালা দূর হয়। তাছাড়াও বেল পাতার রসের সাথে মধু এবং গোলমরিচের গুঁড়া মিক্স করে খেলে জন্ডিস নিরাময় হয়। বেল পাতা থেকে উপকারিতা পেতে হলে বেল পাতা অথবা বেল পাতার রস নিয়মিত খেতে হবে। তাহলেই আপনি কাঙ্খিত ফলাফল পেয়ে যাবেন।
বেল পাতার অপকারিতা-বেল পাতার রস খেলে কি ক্ষতি হয়
বেল পাতার ঔষধি গুনাগুন অনেক। বেল পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে। তেমনি বেল পাতার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। বেল পাতার রস ছেলেদের শরীরের যৌন শক্তি কমিয়ে ফেলে। আপনারা যদি টানা কয়েকদিন বেলপাতা রস পান করেন তাহলে আপনার যৌন শক্তি অনেক কমে যাবে এবং এটি ফিরিয়ে আনতে অনেক দেরি হবে। তাছাড়াও বেল পাতার রস অতিরিক্ত পান করার ফলে শরীরে নানা রকম রোগের দেখা দিতে পারে তাই বেল পাতার রস অতিরক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। না হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা
লজ্জাবতী গাছ প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য লজ্জাবতী গাছ ব্যবহার করা হয়।আসুন জেনে নেই লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা এবং তা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে।
কাশির জন্যঃ আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় কাশি হলে লজ্জাবতী গাছ দিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। লজ্জাবতীর শিকড় পিষে খেলে কাশি দূর হয়।
রক্ত আমাশয়েঃ অনেক সময় বেশি মসলাযুক্ত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার অথবা বাইরের খাবার খাওয়ার কারণে বা কোন জীবাণুর কারণে ডায়রিয়া হলে রক্তক্ষরণ হলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লজ্জাবতী গাছ দিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। রক্ত আমাশয় নিরাময়ে লজ্জাবতী গাছের ব্যবহারের নিয়ম-
- ৩ গ্রাম লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের গুড়া বইয়ের সাথে মিক্স করে খেলে রক্ত ডায়রিয়া নিরাময়ে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
- ১ গ্লাস পানিতে দশ গ্রাম লজ্জাবতী শিকড়ের ক্বাথ তৈরি করে,সেই ক্বাথ সকাল ও সন্ধ্যা খেলে রক্ত ডায়রিয়া এবং ডায়াবেটিস নিরাময়ে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
পেট ফাঁপা বা বদহজমেঃ পেট ফাঁপা বদহজম দূর করতে লজ্জাবতী গাছ বেশ উপকারী। পেট ফাঁপা বা বদহজম তখনই হয় যখন খাওয়া দাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। লজ্জাবতী পাতার রস ৫ থেকে ১০ মিলি পান করলে জ্বর, জন্ডিস এবং নানা ধরনের পিত্তজনিত রোগে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
পাইলস থেকে মুক্তিঃ বেশি মসলাযুক্ত খাবার খেলে পায়েল সহ সম্ভাবনা বেশি থাকে। পাইলসের সমস্যার কারণে মলত্যাগের সময় রক্তপাত হয়, এই সমস্যাকে ব্লাডি পাইলস বলা হয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য লজ্জাবতী গাছ আপনার জন্য বেশ উপকারী হবে। লজ্জাবতী গাছের রস ব্লাডি পাইলসের রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করে এবং তা নিরাময়ে সহায়তা করে থাকে।
- ১ চামচ লজ্জাবতী গাছের পাতার গুড়া দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে তিনবার পান করলে পাইলসের রোগে উপকার পাওয়া যায়।
মুত্রনালীর সমস্যায়ঃ অতিমাত্রায় প্রসবের সমস্যায় লজ্জাবতী গাছ বেশ উপকারী। লজ্জাবতী গাছের পাতা পিষে খেলে মূত্রনালীর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
স্তনের শিথিলতায় লজ্জাবতী গাছের উপকারিতাঃ প্রায়শই বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে স্তন শীতল হওয়ার সমস্যা হয়ে থাকে। লজ্জাবতী ও অশ্বগন্ধার শিকড় পিষে পেস্ট লাগালে শীতলতা অনেকটা কমে যায়।
হাইড্রোসিল থেকে মুক্তি পেতেঃ পুরুষের অন্ডকোষে পানি জমে যাওয়ার কারণে এই রোগের সৃষ্টি হয়। লজ্জাবতী গাছ ব্যবহার করলে এ রোগ থেকে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। লজ্জাবতী গাছের পাতা পিষে অন্ডকোষের ফলাতে লাগালে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
সাইনাস এর ব্যথায়ঃ সাইনাসের ব্যথা বা অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে লজ্জাবতী গাছ খুবই কার্যকর।
আলসার রোগেঃ লজ্জাবতীর শিকড় বা বীজের গুড়া খেলে। আলসার রোগে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
ক্ষত সারাতেঃ ক্ষতস্থানে লজ্জাবতী শিকড়ের পেস্ট লাগালে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
লেখকের শেষ কথা
বেল পাতা ও বেল অনেক উপকারী একটি উদ্ভিদ। বেল পাতার ঔষধি গুনাগুন রয়েছে এবং অনেক উপকারিতা হয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে বেল পাতার ঔষধি গুনাগুন ও বেল পাতা খাওয়ার নিয়ম সহ বেলপাতা যাবতীয় তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা বেলপাতা সম্পর্কে সকল সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে অথবা যে কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে নিচে কমেন্টে লিখতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url