পুদিনা পাতার জুসের ৭টি আশ্চর্য উপকারিতা
পুদিনা একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। পুদিনা পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই পুদিনা পাতাকে অনেকভাবে ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়। যেমন পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা, পুদিনা পাতার চায়ের উপকারিতা, রূপচর্চার ক্ষেত্রে পুদিনা পাতার উপকারিতা সহ আরো অন্যান্য উপকারিতা রয়েছে এই আর্টিকেলে পুদিনা পাতার সকল উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি এবং পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আপনার যদি পুদিনা পাতার সকল উপকারিতা ও উপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চান তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পুদিনা পাতার উপকারিতা
পুদিনা পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই পুদিনা পাতা কে নানাভাবে ব্যবহার করে এর থেকে উপকার পাওয়া যায়। যেমন পুদিনা পাতা কে জুস বা চা করে খাওয়া যায়, রূপচর্চায় পুদিনা পাতা ব্যবহার করা যায়, চুলের জন্য পুদিনা পাতা ব্যবহার করা যায়, রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায় ইত্যাদি। এ পুদিনা পাতা ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল
- মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এই পুদিনা পাতা। কারন পুদিনা পাতাই ভিটামিন সি রয়েছে।
- পুদিনা পাতার জুস খেলে গ্যাস, পেট ব্যথা ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- পুদিনা নিঃশ্বাসকে সতেজ করে এবং এর পাশাপাশি মুখে থাকা জীবাণু ও দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
- রূপচর্চের জন্য পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয় পুদিনা পাতা কি পেস্ট করে ত্বকে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ হয়।
- মাথাব্যথা দূর করার জন্য কয়েকটা পুদিনা পাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি থেকে বাঁচবো টানলে মাথাব্যথা ভালো হয়ে যায়।
- ওজন কমানোর জন্য পুদিনা পাতা অনেক উপযোগী। পুদিনা খেলে মানুষের ক্ষুধা কম লাগে। যার ফলে মানুষ কম কম খায় এবং ওজন কমানোর সহজ হয়।
- শরীর ক্লান্ত লাগলে পুদিনা পাতা মিশ্রিত চা খেলে শরীরে তাৎক্ষণিক এনার্জি যোগান দিতে পারে এবং ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
- পুদিনার একটি সক্রিয় প্রধান হল মেন্থল যা মাইগ্রেনের ব্যথা ও বমি বমি ভাব এবং বমি কমাতে পারে।
- পুদিনার একটি গুণ রয়েছে যা রোম্যরিনিক অ্যাসিড নামে পরিচিত। যার শরীরের চুলকানি এবং হাচির মত এলার্জি লক্ষণ কমাতে পারে।
- বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন মস্তিষ্কের জ্ঞানের ক্ষমতা বাড়াতে পুদিনা পাতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যা নিয়মিত খেলে উপস্থিত বুদ্ধি ,সতর্কত, স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
পুদিনা পাতা জুস, চা,সরাসরি অথবা ব্লেন্ড করে ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি পুদিনা পাতার উপকারিতা পেতে চান তাহলে সঠিকভাবে আপনাকে পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কি কি ভাবে আমরা পুদিনা পাতা খেতে পারব।
- পুদিনা পাতাকে আপনারা জুস বানিয়ে খেতে পারেন। পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা রয়েছে। পুদিনা পাতা জুস খেলে সর্দি-কাশি ও পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।
- পুদিনা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া যায়। পুদিনা পাতার চা খেলে শরীর সতেজ হয়, ক্লান্তি দূর হয়, শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরের রক্ত চলাচলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- শরীরে যেকোনো ধরনের ব্যথা দূর করতে ব্যথার স্থানে পুদিনা পাতা বেটে লাগিয়ে রাখলে দেখবেন ধীরে ধীরে ব্যথা সেরে গেছে।
- মন সতেজ ও ফুরফুরা করতে এবং মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করতে পুদিনা পাতার ঘ্রান অনেক কার্যকরী।
- পুদিনা পাতা আপনি সরাসরি সালাত হিসেবে খেতে পারেন। যা আপনার হাঁপানি সমস্যা এবং পেটের নানা সমস্যা দূর করবে।
পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা
পুদিনা পাতা জুসের উপকারিতা অনেক। তাছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই বুক জ্বালাপোড়ার প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে এই পুদিনা পাতার রস ব্যবহার হয়ে আসছে। বৈজ্ঞানিকগণ গবেষণা করে দেখেছেন পুদিনা পাতা অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।আসুন পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
পুদিনা পাতা জুস ব্যথা ও যন্ত্রণাদায়ক পেট ব্যথা সমস্যা দূরীকরণে ব্যবহার করা হয়। পুদিনা পাতার জুসে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং মেন্টাল। এই তিনটি উপাদান ওজনের সাহায্য করে এবং খিচুনি প্রতিরোধ করে থাকে। পুদিনা পাতায় ফাইটো কেমিক্যাল অ্যালকোহল রয়েছে যার কারণে ক্যান্সার বিরোধী সুবিধা পাওয়া যায়। পরে পুদিনা পাতার জুস ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
পুদিনা পাতার বসে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। তাছাড়া পুদিনা পাতার রস ত্বকের ব্রণ দূর করতে অনেক উপকারী। পুদিনা পাতার জুস পক্ষে প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের বিভিন্ন খুত যেমন ব্ল্যাকহেডস,ব্রন দূর করতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া পুদিনা পাতার জুসনিত রোগ ক্যান্ডিনা দূরীকরণে সুন্দরভাবে কাজ করে। যার কারনে পুদিনা পাতার রস ছত্রাক বিরোধী ঔষধ মেট্রনিডাজলের সাথে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পুদিনা পাতার রসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রোজমেরিনিক অ্যাসিড যা এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরে বিভিন্ন এলার্জির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতার রস এলার্জি নিরাময়ে কার্যকারী ভূমিকা রাখে।তাছাড়াও পুদিনা পাতার রস এলার্জির লক্ষণগুলো কমাতেও সাহায্য করে থাকে। পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা অনেক। মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পুদিনা পাতার রস কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
পুদিনা পাতায় ভিটামিন বি,ই,সি,এবং ডি সি রয়েছে বলে বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে। পুদিনা পাতার জুস মানুষের ক্লান্তি এবং হতাশা দূর করতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতায় এন্টি স্পেস মোদিক উপাদান থাকার কারণে পুদিনা পাতার জুস পিরিয়ডের ব্যথা নিরাময় সাহায্য করে। রক্তকে পরিশোধিত হতে সাহায্য করে পুদিনা পাতার জুস। পুদিনা পাতার জুস প্রেগন্যান্ট নারীদের মর্নিং সিকনেস থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে থাকে।
পুদিনা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ব্যাকটেরিয়া বিরোধী ও প্রদাহরোধী থাকে বলে ওরাল ইনফেকশন দূর করতে কার্যকর। ঠান্ডা ও কাশি প্রতিরোধ খুব সুন্দর কাজ করে এই পুদিনা পাতার রস। পুদিনা পাতার রস কয়েক ফোটা গরম পানির ভাবটুকু মুখ দিয়ে টেনে নাক দিয়ে বের করে দিলে নাক ও গলা পরিষ্কার হয়। পুদিনা পাতার জুস এর সাথে ফুটিয়ে পান করতে পারেন। এতে মুখের স্বাস্থ্য ভালো এবং দাঁতের রোগ দূরে রাখতে নিয়মিত ৪ থেকে ৫ পুদিনা পাতা চিবাতে পারেন।
পুদিনা পাতার জুস তৈরির রেসিপি
পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা অনেক। এই পুদিনা পাতার জুস হজমে সহায়তা করে থাকে এবং শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে থাকে। আসুন জেনে নেই কিভাবে পুদিনা পাতার জুস তৈরি করতে হয়।
উপকরণঃ
- এক মুঠো পুদিনা পাতা
- দুই গ্লাস পানি
- স্বাদমতো লবণ
- এক চামচ ভাজা জিরা গুড়া
- 1 টেবিল চামচ লেবুর রস
- একটি কাঁচা মরিচ
- স্বাদমতো চিনি
পদ্ধতিঃ
প্রথমে এক মুঠো পুদিনা পাতা কে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতে হবে। ভালোমতো ব্লেন্ড হয়ে গেলে এতে স্বাদমতো লবণ, এক চা চামচ ভাজা জিরা গুঁড়া, 1 টেবিল চামচ লেবুর রস, একটি কাঁচা মরিচ এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে আরেকবার ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর ছাঁকনিতে করে ছেকে নিয়ে গ্লাসে ঢেলে তাতে কিছু বরফের টুকরা দিয়ে খেতে পারেন বা মেহমানকে পরিবেশন করতে পারেন।
পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা
পুদিনা পাতার চা পান করা অনেক উপকারী। পুদিনা পাতার চা খেলে শ্বাসকষ্ট,সর্দি কাশি,মাথা ব্যথা, থেকে মুক্তি পেতে এই পুদিনা পাতার চা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। অনেক গবেষকগণ বলেছেন পুদিনা পাতার গন্ধের গুনেই অনেক রোগ সেরে যায়। পুদিনা পাতার চায়ের সাথে পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা ও অনেক। পুদিনা পাতার গন্ধ নাক দিয়ে মস্তিষ্ক পর্যন্ত টানলে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সাধারণ ত্বকের সমস্যা, মাথা ব্যাথা, এজমা,হাপানি,হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র পুদিনা পাতা এবং পুদিনা পাতার চা।
পুদিনা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়ন, পটাশিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। যা শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। প্রাচীনকাল থেকে আদিম মানুষ এই পুদিনা পাতাকে ঔষধি ভেবে ব্যবহার করে আসছে। অনেক সহজেই পুদিনা পাতা চাষ করা যায়।
আয়ুর্বেদিক নীতি অনুযায়ী এই পুদিনা পাতা বহু রোগ সারাতে কাজে লাগে। রান্নার সময় তরকারিতে এই পুদিনা পাতা সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পুদিনা পাতার চা হলো এমন একটি চা যা পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি। তাই সব গুনাগুন পুদিনা চা এর মধ্যেও রয়েছে। এই পুদিনা পাতার চা কঠিন রোগ প্রতিরোধ করতে ভীষণ উপকারী।
প্রতিদিন এক কাপ করে পুদিনা চা খান কারণ এই পুদিনা পাতায় থাকা মেন্থল ক্যান্সার দূর করে। প্রতিদিন এক কাপ চা দূর করবে এই কঠিন রোগ। মানুষের মাঝে অনেক মানসিক চাপ রয়েছে যেমন অফিসের কাজের চাপ, পারিবারিক অশান্তি, টাকা পয়সা চিন্তা ইত্যাদি। প্রতিদিন এই পুদিনা পাতার এক কাপ চা খেলে এসব মানসিক চাপ থেকে মুক্তির জন্য পুদিনা পাতার চা অনেক উপকারিতা রয়েছে।
শরীরের বিভিন্ন ব্যাথা থেকে মুক্তির জন্য প্রতিদিন এক কাপ পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন। এই এক কাপ চায়ের খেলে শরীরের যাবতীয় ব্যাথা দূর হয়। হাঁপানি ও এজমার সমস্যা দূর করতে পুদিনা পাতার চা পান করতে পারেন। শরীরের যে কোন সংক্রমণ দূর হবে। প্রতিদিন এই চা পান করলে শরীর থাকবে সুস্থ।
পুদিনা পাতার চা মেয়েদের মাসিকের ব্যাথা ও ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে। গবেষণা করে দেখা গেছে মাসিকের ক্র্যাম্পের সমস্যায় ভুগছেন এমন ১৫৭ জন ছাত্রী পুদিনা পাতার চা খাওয়ার পর ব্যথা কম অনুভব করেছেন। তাছাড়াও পুদিনা পাতার ব্যথা নাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তাই এটা বলা যেতে পারে যে পিরিয়ডের সময় পুঁজি না চা অনেক উপকারী হতে পারে।
পুদিনা পাতার চা তৈরির রেসিপি
পুদিনা পাতার চায়ের উপকারিতা অনেক। পুদিনা পাতার চা তৈরি করা অত্যন্ত সহজ। পুদিনা পাতায় থেকে উপকারিতা পেতে হলে কিভাবে এটি তৈরি করতে হয় সেটাও জানতে হবে। নিচে দেয়া যদি না পাতার চা তৈরি রেসিপি এর সাহায্যে আপনি সহজেই এটি তৈরি করতে পারেন।
উপকরণঃ
- পুদিনা পাতা: ১২-১৫
- পানি: ২-২.৫ কাপ
- মধু: প্রয়োজনমত এবং
- একটি সসপ্যান
কার্যপ্রণালীঃ প্রথমে পানি একটু সসপ্যানে নিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর এতে ১২ থেকে ১৫ টি পুদিনা পাতা দিন। এরপর পানি কিছুক্ষণ ফুটতে দিন। তারপর কিছুক্ষণ পর এইটা ছাকনি দিয়ে থেকে একটি কাপে ঢেলে নিন এবং এর সাথে স্বাদমতো মধু যোগ করুন। আপনার চা প্রস্তুত এবার আপনি এতে স্বাস্থ্যকর ভাবে চুমুক দিতে পারেন।
চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা
আমরা অনেকেই চুল পড়ার মত সমস্যায় বসে থাকি। বিভিন্ন কারণ যেমন আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ এবং নানা অযত্নের কারণে চুল পড়ে থাকে। চুল পড়া কমাতে হলে আমাদের মাথার ত্বক শীতল রাখতে হবে। চুল পড়া কমানোর জন্য এমন একটি উপাদান রয়েছে যা আপনারা নিজেদের রান্নাঘরেই খুঁজে পাবেন এবং তা হল পুদিনা পাতা। চুল পড়ার সমাধানে পুদিনা পাতার হেয়ার প্যাক দুর্দান্ত কাজ করে।
পুদিনা পাতার হেয়ার প্যাক বানানোর জন্য আপনাকে এক কাপ পরিমাণ পুদিনা পাতা, দুই এক কাপ, মধু এক চা চামচ, এবং জলপাইয়ের তেল এক চা চামচ প্রয়োজন। প্রথমে যেই একটা পুদিনা পাতা নিয়েছিলেন সেগুলো আপনাকে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এর সঙ্গে যোগ করুন মধু,দই ও জলপাই তেল। সবগুলো উপাদান একসঙ্গে নিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করতে হবে।
তারপর হেয়ার প্যাকটি মাথার স্কিনে ভালোভাবে লাগান এবং আলতো করে মেসেজ করুন। তারপর এটিক ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য রাখতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট হয়ে গেলে তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। পুদিনা পাতায় থাকা ঠান্ডা প্রভাব আপনার চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে থাকে।
পুদিনা পাতার হেয়ার প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে। মাথার স্কিনকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এই প্যাক চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগান দেশ। এই প্যাক ব্যবহারে চুল হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যকর এবং শক্তিশালী। আপনি যদি ভালো ফলাফল পেতে চান তাহলে সপ্তাহে সর্বনিম্ন দুই দিন পুদিনা পাতার হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। আশা করি উপরের কথামতো আপনি যদি নিয়মিত পুদিনা পাতার হেয়ার প্যাক চুলে ব্যবহার করেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন ইনশাআল্লাহ।
রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার
আপনারা হয়তো জানতেন না ত্বক ভালো রাখতে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকরী। আপনারা যে নানা ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ বা কন্ডিশনার ব্যবহার করছেন সেটাতেও কিন্তু পুদিনার নির্যাস থাকে। এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে যাদের ত্বকের সমস্যা নিয়ে ভুগতে হয় না। হাতের কাছেই থাকা পুদিনা পাতা আপনাকে এসব সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে। আসুন ত্বকের যত্নে পুদিনা পাতার ব্যবহার ও কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
ব্রণ কমাতে সাহায্য করেঃ আপনি যদি ব্রণের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে পুদিনা পাতা ব্যবহার করুন। এতে ভিটামিন এ এবং স্যালিসিলিক অ্যাাসিড উপাদান রয়েছে। ত্বকে সিবাম অয়েল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে এই দুই উপাদান। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ব্রণ হওয়ার ভয় বেশি থাকে। ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যাান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ এই পুদিনা পাতা।
ফলে এটি ত্বকে ব্যবহার করলে প্রদাহ রোধ করে এবং ব্রণ দূর করে। এটি ত্বকে ব্যবহার করার জন্য প্রথমে আপনাকে পুদিনা পাতার পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর ওই পেস্ট ত্বকের উপরে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বেস্ট শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এতে ত্বক পরিষ্কার হবে এবং ব্রণের দাগ ও দূর হবে।
ক্ষতি নিরাময় করেঃ ত্বকের যেকোনো ধরনের ক্ষতি হলে তা নিরাময় করতে পুদিনা পাতা সাহায্য করে থাকে। ত্বকে চুলকানি,মশার কামড় এবং বিভিন্ন ক্ষত ইত্যাদি দূর করতে পুদিনা পাতা বেস কার্যকরী। তাই আপনাকে প্রথমে পুদিনা পাতা ব্লেন্ড করে রস বের করে নিতে হবে। তারপর আক্রান্ত স্থানে ব্লেন্ড করা পুদিনা পাতার রসটুকু লাগিয়ে নিতে হবে। এতে ত্বকের আক্রান্ত স্থান সেরে ওঠার পাশাপাশি ত্বকের জ্বালাপোড়াও দূর হবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ পুদিনা পাতা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। এর অ্যান্টিসেপটিক উপাদান ত্বকে ব্যাস ও দাগ হতে দেয় না। এই পুদিনা পাতা তোকে ব্যবহার করলে সূর্যের আলোর কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয় সেটাও কমিয়ে দেয়। তাই আপনাকে পুদিনা পাতার রস তোকে ব্যবহার করতে হবে মাসে কয়েকবার ব্যবহার করলে আশা করা যায় ভালো ফলাফল পাবেন।
ডার্ক সার্কেল দূর করেঃ যারা অনেক রাত জেগে থাকে তাদের চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল হতে পারে। তা দুশ্চিন্তা বাতার কারণেও হতে পারে। কিন্তু এই দাগ অনেকটাই মুখের সৌন্দর্য কমিয়ে দেয়। চোখের নিচের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল দূর করতে এই পুদিনা পাতার রস অনেক কার্যকর হয়। সেজন্য পুদিনা পাতার পেস্ট তৈরি করে মুখে সারারাত লাগিয়ে রাখুন। তারপর সকালে উঠে পরিষ্কার ও ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন ব্যবহার করলে ডার্ক সার্কেল দ্রুতই দূর হবে।
রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহার
পুদিনা পাতা রান্নায় সুগন্ধী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জীবাণুনাশক হিসেবে পুদিনা পাতা কাজ করে। । কাশি, অরুচি এবং পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে যদি না পাতার চা বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়াও পুদিনা পাতা রূপচর্চার কাজেও ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন খাবারে বাড়তি রিফ্রেশমেনট আনার জন্য পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়।
পুদিনা পাতার চাষ পদ্ধতি
বিভিন্ন পদ্ধতিতে পুদিনা পাতার চাষ করা যায়। পুদিনা পাতা চাষ করা অনেক সহজ। ভেজা মাটিতে পুদিনা পাতার ডাল লাগালেই তা থেকে নতুন গাছ জন্ম নেই। এটা চাষের জন্য খুব একটা উর্বর মাটির প্রয়োজন নেই। এই পুদিনা গাছ ঔষুধি গুন সম্পন্ন তাই এর ব্যাপক। জমি কিংবা টবে ছাদে বা বেলকনিতেও এর চাষ করা যায়।
পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক
পুদিনা পাতার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে এবং তার সাথে কিছু ক্ষতিকর দিক ও আছেপুদিনা পাতা বিভিন্ন ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে থাকে। তাছাড়াও পুদিনা পাতা ব্লাড সুগারের মাত্র কমায়, বাচ্চাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা এবং মুখে জ্বালাপোড়ার কারণও হতে পারে। পুদিনা পাতা অতিমাত্রায় খেলে পেট ব্যথা ও বমি বমি ভাব হতে পারে।
পুদিনা পাতার অপকারিতা
পুদিনা পাতার উপকারিতা অনেক কিন্তু এর কিছু উপকারিতা ও রয়েছে সেগুলো হল পুদিনা পাতার চা শরীরের রক্তের শর্করা কমিয়ে দেয়। আবার যাদের ডায়াবেটিসের ওষুধ নিয়মিত খান তাদের ওষুধের সাথে পুদিনা পাতার চা মিশ্র বিক্রিয়া ঘটাতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পুদিনা পাতার চা এড়িয়ে চলা উচিত অথবা খেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
পুদিনা পাতা অনেক উপকারী উদ্ভিদ। এই পুদিনা পাতা অনেক ঔষধি হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আজকের আর্টিকেলে পুদিনা পাতার জুসের উপকারিতা, পুদিনার উপকারিতা, পুদিনা পাতার চায়ের উপকারিতা, পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম, ও আরো অন্যান্য ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পুদিনা পাতা ও পুদিনা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আপনারা আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা সঠিক তথ্য পেয়েছেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url